তিনি মন্ত্রী হলেন। সেই উপলক্ষে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা। সোমবার, পুরভবনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পরিবেশ নিয়ে সমস্যা জেরবার শহর কলকাতা। গঙ্গার জল দূষণ থেকে পুকুর বুজিয়ে কংক্রিট করার প্রবণতা, নানা অভিযোগ পুরসভার বিরুদ্ধে। পরিবেশ-সহ রাজ্যের তিনটি দফতরের মন্ত্রী হওয়ার পরে সোমবারই প্রথম পুর-অধিবেশনের সম্মুখীন হন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেখানেও তাঁর দিকে ধেয়ে এল পরিবেশ সংক্রান্ত প্রশ্ন। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের ব্যবহার, পুকুর সংস্কারে পুরসভার ‘ব্যর্থতা’, এমনই নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলো নবাগত পরিবেশমন্ত্রীর কাছে। গত ৫ বছরের মতো এ দিন অবশ্য ওই সব প্রশ্নের দায় কারও ঘাড়ে চাপাতে চাননি মেয়র। সোজা ব্যাটেই খেলতে চেয়ে বলেন, ‘‘মাঝেমাঝে দেখা যায়, জঞ্জাল ফেলে পুকুর বুজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে পরে সেখানে নির্মাণকাজ করা যায়। ও সব চলবে না। পুকুর সরকারি হোক বা ব্যক্তিগত, তা সংস্কারে সরকার সহায়তা করবে।’’
এ দিন অধিবেশনে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন ছিল, তাঁর ওয়ার্ডে পুরসভার কতগুলো পুকুর রয়েছে এবং তা সংস্কারে পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কি না। সংশ্লিষ্ট দফতরের মেয়র পারিষদ তার সংখ্যা জানাতেই তাঁকে সরিয়ে মাইক ধরেন স্বয়ং পরিবেশমন্ত্রী। বস্তুত শহরের পরিবেশ সুরক্ষিত করার কাজটা যে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ, তা বিলক্ষণ জানেন তিনি। এ বার ওই দফতরের মন্ত্রী হয়ে তো আর চুপ করে বসে থাকা সমীচীন হবে না, তাই কলকাতার পুর-প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘এমন ঘটনা চোখে পড়লেই আমাকে জানাবেন। পুকুর বোজানো রুখতে সব ব্যবস্থা নেবে পরিবেশ দফতর।’’ তিনি জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পকে সার্থক রূপ দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাজ্য সরকার। কলকাতা পুরসভা তা করে দেখাতে চায়।
শহরের একাধিক ওয়ার্ডে পানীয় জলের সঙ্কট নিয়েও প্রশ্ন ওঠে অধিবেশনে। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের চয়ন ভট্টাচার্য পানীয় জল সরবরাহের সঙ্কটের কথা বলতে গিয়ে জানান, তাঁর ওয়ার্ডে মূলত মাটির নীচের জল গভীর নলকূপের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটা নলকূপ খারাপ হয়ে যাওয়ায় এই গরমে সঙ্কট আরও বেড়েছে। তা সমাধানের জন্য এ দিন অধিবেশনে প্রস্তাব তোলেন চয়নবাবু। মাটির নীচ থেকে জল তোলা পরিবেশের পক্ষেও বিপজ্জনক। স্বভাবতই পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে তার দায় তো শোভনবাবুকেই নিতে হবে। তা জেনেই মেয়র বলেন, ‘‘শহর থেকে গভীর নলকূপের ব্যবহার তুলে দিতে চায় পুরসভা। ইতিমধ্যে অনেকগুলো কমানো হয়েছে, আরও হবে। সর্বত্র পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়ার পথেই এগোচ্ছে পুর-প্রশাসন। এর জন্য গার্ডেনরিচে আরও (এখন উৎপাদন ক্ষমতা ১৮৫ মিলিয়ন গ্যালন) ২৫ মিলিয়ন গ্যালন জলের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। সেই কাজ হয়ে গেলে শহরে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।
কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে মেয়র পদে থেকে কেউ মন্ত্রী হননি। সেই উপলক্ষে এ দিন মেয়রকে সম্বর্ধনা দেয় পুর-প্রশাসন। পুরভবনের চারপাশে ফেস্টুন, ব্যানার, ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মেয়রের ঘরে ওঠার আগে সিঁড়ির সামনে পাতা হয় সবুজ কার্পেট। পুর-অধিবেশন কক্ষের দিকে যাওয়ার করিডরে সাজানো ফেস্টুনে লেখা ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় মন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন মেয়র।
এ দিন সকালেই শোভনবাবু ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দমকল দফতরের সদর অফিসে যান। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দুপুরে যান পুরভবনে। বিকেলে আবার যান সল্টলেকে পরিবেশ ভবনে। তবে আর এস এন ব্যানার্জি রোডে আবাসন দফতরের অফিসে যেতে পারেননি। জানান, মঙ্গলবার ওই দফতরে যাবেন। রাজ্যের তিনটি দফতরের সঙ্গে মেয়রের দফতর, এত কী ভাবে সামলাবেন তিনি? শোভনবাবুর উত্তর, ‘‘ক’টা দিন যেতে দিন, সব বুঝতে পারবেন।’’