রবিবার কলকাতা পুরসভার সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব ছবি।
রেমাল ঘুর্ণিঝড় দুর্বিপাকে ফেলতে পারে শহর কলকাতাকে। তাই রবিবার রাতভর কলকাতা পুরসভায় থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। দুপুরে পুরসভার সাংবাদিক বৈঠক করে পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানান তিনি। সঙ্গে জানিয়ে দেন, তিনি ছাড়াও কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈন ও বিভিন্ন বিভাগের ডিজি-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা নিজেদের অফিস থেকেই পরিস্থিতির উপর নজরদারি করবেন। পাশাপাশি, বোরোগুলিতেও এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের বোরো অফিস সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘আমফানের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সব বোরোতে গাছ কাটার মেশিন থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেসিবি মেশিন ও ক্রেনের বন্দোবস্ত রেখেছি। যাতে দ্রুত শহরকে সচল করা যায়, সেই কারণেই পুরসভার মূল অফিসে মেয়র সহ সব শীর্ষ আধিকারিকেরা থেকে নজরদারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
মেয়র বলেন, ‘‘রাতে যত ক্ষণ পর্যন্ত শহর থেকে এই বিপর্যয় সরে যায়, তত ক্ষণ আমরা সকলেই আছি কলকাতা পুরসভায়। আগামী কাল সকালে কলকাতার অনেকটা জায়গা জলমগ্ন থাকবে। হয়তো একটু সময় দিলে এগারোটার পর সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কলকাতাবাসীকে বলব, বাড়িতে থাকুন। বিপজ্জনক বাড়িতে থাকলে, আমাদের ক্যাম্পে আসুন, নিজেকে রক্ষা করুন। কলকাতা পুরসভা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের জন্য এই বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। যাঁরা উপকূলবর্তী এলাকায় রয়েছেন, তাঁদের বলব, ফ্লাড সেন্টারে যাওয়া উচিত। শুধু মানুষ নয়, গবাদি পশু রাখারও ব্যবস্থা আছে সেখানে।’’
ঝড়ের কারণে বন্দর এলাকার কোনও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে আদর্শ হিন্দু বিদ্যালয়ে লোক সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব বোরো মিলিয়ে অনেকগুলি অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। প্রত্যেক বোরোতে দু’টি করে স্কুল নেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষ রাখার জন্য। ফিরহাদ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৩ হাজার স্থায়ী কর্মী আর ৩৩৮ জন নিকাশি কর্মী রয়েছেন। প্রায় ১৫ হাজার কর্মীকে রাস্তায় নামানো হচ্ছে।
বৃষ্টিতে জল জমা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘রাত দুটোর আগে থেকে আমরা গঙ্গায় জল ফেলতে পারব না। তাই লকগেট বন্ধ করে দিতে হবে। প্রায় ৪৮০টি পাম্প তৈরি রয়েছে। তবে চার-পাঁচ ঘণ্টা জল থাকবে। আমরা ম্যাজিশিয়ান নই। দিনরাত পরিশ্রম করছেন সকলে। কলকাতার অবস্থা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা ঠিক করার চেষ্টা করব।” তিনি আরও বলেন, “যেখানে জল জমে, সেই সব এলাকায় ২২টি পাম্প সর্বদা চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকেল থেকেই সেগুলি চালানোর কথা। আমরা তৈরি আছি। তবে কাজ করতে কিছু সময় লাগে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর ৪ বা ৫ ঘণ্টা লাগবে কলকাতা থেকে জল সরাতে। আমরা সকলেই রাতে কলকাতা পুরসভায় থাকছি। আমরা টিম কলকাতা পুরসভা প্রস্তুত রয়েছি এই বিপর্যয় মোকাবিলায়। মুখ্যমন্ত্রী সব সময় খোঁজখবর নিচ্ছেন।’’
বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত সমস্যা প্রসঙ্গে মেয়র জানিয়েছেন, কিছু কিছু জায়গায় সিইএসসি ও ডাবলুবিএসইডিসিএল-এর তরফে লোক দেওয়া হয়েছে জরুরি অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিষেবায় কোনও সমস্যা হলে, তা সমাধানের জন্য। প্রতি বোরোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এই বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মীদের।
ReplyForward