ফিরহাদ হাকিম। — ফাইল চিত্র।
যত সময় গড়াচ্ছে, ততই মেজাজ হারাচ্ছেন মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম। গার্ডেনরিচে ঠিক যেখানে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল নির্মীয়মাণ বহুতল, তার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে আজহারমোল্লা বাগানে পাঁচ ফুট জায়গার মধ্যেই পাঁচতলা বাড়ি উঠে যাওয়ার ঘটনার কথা এ বার সামনে এসেছে। ছবি-সহ সেই তথ্য ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার ববি গার্ডেনরিচে যান। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে দৃশ্যত উত্তেজিত দেখায় তাঁকে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই বাড়ি কী করে হল, আমি কী করে বলব? আমি আইন নিয়ে বসে নেই, যে সব আমার কাছে আসবে!’’ সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের কথায় ‘‘বেআইনি নির্মাণ একমাত্র শিল্প কলকাতার। এত বড় ঘটনার দায় নেবে না? মেয়রের সরে যাওয়া উচিত, নয়তো সরিয়ে দেওয়া উচিত।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনায় দশ জনের মৃত্যুর পরে বিভিন্ন মহল থেকে আঙুল উঠছে পুূর-প্রশাসনের দিকে, যার মাথায় রয়েছেন মেয়র। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ উঠে আসছে। মেয়র অবশ্য প্রথম থেকেই সেই দায় ঠেলেছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দিকে। বুধবার পুরসভায় বৈঠকে সবার সামনে তিনি এক ইঞ্জিনিয়ারকে বলেন, “হয় আপনি চোর, নয় অপদার্থ।” পুরসভার অন্দরের খবর, এতে ইঞ্জিনিয়ারেরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক মদত ছাড়া শহরের বেআইনি নির্মাণ হওয়া কার্যত অসম্ভব।
গার্ডেনরিচে উদ্ধারকাজ শেষ হওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) উদ্ধারকাজ শেষ করলেও এখনও সেখানে আব্দুল রউফ নিজামি ওরফে শেরু নামের এক ব্যক্তি আটকে রয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। এনডিআরএফ-এর দাবি, ওই জায়গায় নতুন করে কোনও দেহ তারা বুধবার রাত পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি। দেহ উদ্ধার যতক্ষণ না হচ্ছে, ততক্ষণ খোঁজ চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে শেরুর পরিবার।
এনডিআরএফের দাবি, মৃতদেহ না মিলল ধ্বংসস্তূপ তড়িঘড়ি তোলা সম্ভব নয়। তাতে মৃতদেহের ক্ষতি হতে পারে। শেরুর দাদা মহম্মদ ফারুক নিজামি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পুরসভা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে। তাতেই অনেকটা সময় বেরিয়ে যাচ্ছে। মেয়রকে অনুরোধ করেছি যাতে কাজ দ্রুত হয়।’’ মেয়ার জানান, শেরুর পরিবারের অনুরোধে যতক্ষণ না দেহ পাওয়া যায়, খোঁজ চালানো হবে। রাতেও উদ্ধার কাজ বন্ধ করা হবে না।
এ দিন মেয়রের দাবি অনুযায়ী, চার দিন আগে থেকেই ওই জায়গায় বুলডোজার ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। ঘিঞ্জি এলাকা বলে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে আশপাশের বহুতল ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এনডিআরএফ চাঁঙড় ভেঙে কাজ চালানোর পরেও সরু রাস্তার জন্যই পুরসভার গাড়ি ঢুকিয়ে সে সব বার করা যাচ্ছে না।
লালবাজারের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরা এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বাড়ির চুক্তির নথির খোঁজ করেন। জমিটির অন্য মালিকদের ঘরে গিয়েও পুলিশ তল্লাশি করেছে বলে খবর। ঘটনাস্থল থেকে ইট-বালির নমুনাও সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জেনেছে, ধৃত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমের সঙ্গে জমির মালিক মহম্মদ সরফরাজের ২০২২ সালে নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল। পাঁচতলা বাড়ির প্রতি তলায় দু’টি শোয়ার ঘর-সহ চারটি ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। জমির দামের পাশাপাশি সরফরাজকে কয়েকটি ফ্ল্যাট দেওয়ার কথাও নাকি হয়েছিল।
মেয়রের পদত্যাগ দাবি করে এ দিন কলকাতা জেলা আরএসপি বলেছে, নিচুতলার পুর-আধিকারিকদের উপরে দোষ না ঠেলে ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। কোর্টের মাধ্যমে অঙ্ক নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।