ট্র্যাফিক নিয়মের তোয়াক্কাই করে না মিছিলে আসা বাইকবাহিনী

বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তবে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মতে, মিটিং-মিছিলের সময়ে হাতে বা বাইকের সামনে কোনও দলীয় পতাকা থাকলে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় নিয়ম ভাঙার ছাড়পত্র!

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৯
Share:

এক পথ: দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সময়ে হেলমেট পরেন না বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই। ফাইল চিত্র

প্রশাসন চায়, সকলেই মেনে চলুন ট্র্যাফিক-বিধি। মানুষকে সচেতন করতে সারা বছরই প্রচার হয় ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর। রাস্তায় প্রতিদিনই হেলমেটবিহীন বাইক আরোহীদের ধরা হলে করা হয় জরিমানা। কিন্তু রাজনৈতিক সমাবেশ বা মিছিলে আসা বাইকবাহিনী কি মেনে চলে সেই নিয়ম?

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তবে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মতে, মিটিং-মিছিলের সময়ে হাতে বা বাইকের সামনে কোনও দলীয় পতাকা থাকলে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় নিয়ম ভাঙার ছাড়পত্র!

রাজনৈতিক মিছিল বা সভায় যোগ দিতে আসা বাইক আরোহীরা যে ট্র্যাফিক-বিধি মানবেন না, এটাই যেন অঘোষিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এ জোর দিলেও সম্প্রতি নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় তিন দিন ধরে কলকাতা ও হাওড়ায় চলা শাসক দলের মিছিলেও দেখা গিয়েছে হেলমেটহীন বাইকবাহিনীকে। সাধারণ মানুষও জানাচ্ছেন, নির্বাচনী প্রচার কিংবা রাজনৈতিক জনসভায় যে সমস্ত কর্মী-সমর্থক বাইক নিয়ে আসেন, তাঁরা কেউই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। বরং দেখা যায়, শহর বা জেলার মূল রাস্তা, এমনকি জাতীয় সড়কগুলিতেও একসঙ্গে ছুটে চলছে কয়েকশো বাইক। চালক বা পিছনে বসা আরোহী— কারও মাথাতেই হেলমেটের বালাই থাকে না। সেই জায়গায় দেখা যায়, দলীয় পতাকা মাথায় ফেট্টির মতো করে বাঁধা। কোনও কোনও বাইকে দেখা যায়, নিয়ম ভেঙে চেপে বসেছেন তিন বা চার জন। এক পথচারীর কথায়, ‘‘কে আটকাবে ওদের? আটকালেই তো ঝামেলা। তাই যা হচ্ছে, তা দেখেও সবাই চুপ থাকেন।’’

Advertisement

বিষয়টি তেমন নয় বলেই অভিমত রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক হাজার মানুষ যখন কোনও রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, তখন হেলমেট না পরার জন্য আটকালে আইন-শৃঙ্খলার বিষয় এসে যায়। তাই তখনই কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু রাস্তার সিসি ক্যামেরায় সব ছবি ধরা থাকে। তা দেখে পুলিশ পরে মামলা বা জরিমানা করে। এমন উদাহরণও অনেক আছে।’’

কিন্তু প্রশাসন তো শেষ কয়েক বছর ধরে রাজ্য জুড়ে মানুষকে দুর্ঘটনার বিষয়ে সচেতন করতে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর প্রচার করছে। বেসরকারি স্তরেও চলছে সেই প্রচার। তার পরেও এমন উদাসীনতা কেন? রাজনৈতিক মিছিলে যাওয়ার পথে ট্র্যাফিক আইন না মেনে চললে কী দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না?

বিষয়টিকে রাজনৈতিক আর অরাজনৈতিক মিছিল বলে ভাগ করাটা ঠিক নয় বলেই মনে করেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁর সচেতনতা কম, তিনিই হেলমেটকে গুরুত্ব দেন না। শাসক দলের লোকজন মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে হেতু মুখ্যমন্ত্রী, তাই তাঁর ঝান্ডা থাকলেই সেটা হেলমেটের থেকে শক্তিশালী। এত কোটি টাকা খরচ করে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের প্রচার হলেও সচেতনতা যে তৈরি হয়নি, তার প্রমাণ কলকাতার তিন দিনের মিছিলে আসা বাইকবাহিনী।’’

আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া মিটিং-মিছিলে যাওয়া নতুন কিছু নয়। একটা পরম্পরা চলে আসছে। রাজনৈতিক দলের মিছিল হলে কোনও আইন নেই। তবে যে সরকার সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের প্রচার করছে, সেই শাসক দলের লোকেরা আগে ট্র্যাফিক আইন মানুন। না হলে বাকিরা মানবেন কেন?’’ ২০১৭ সালে রায়গঞ্জে পুর ভোটের প্রচারে হেলমেট ছাড়া বাইকের সওয়ারি হওয়ায় দিলীপবাবু ও লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। দিলীপ বলেন, ‘‘এ রকম বহু মামলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন আইন, সংবিধান তাঁর জন্য নয়। শুধু বিরোধীদের জন্য। তাই ওঁর কোনও আইন মানব না।’’

যদিও শুভেন্দু-দিলীপ-সুজনের মতে, ‘‘সকলেরই দায়িত্ববান হয়ে হেলমেট পরা উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement