—ফাইল চিত্র।
কাজ ও পরিকাঠামোর দিক দিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের সব ব্লাডব্যাঙ্কের কাছে তার ‘দৃষ্টান্ত’ হওয়ার কথা। অথচ, ‘মডেল’ ব্লাডব্যাঙ্কের তকমাধারী সেই মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্ক গত দেড় বছর ধরে কাজের গুণমান রক্ষা ও পরিকাঠামোর পরীক্ষায় লাগাতার ফেল করছে! ২০১৭ সালে এর জন্য লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ পর্যন্ত হয়নি। শেষ বার লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হয়েছে ২০১৬ সালে।
গত দেড় বছরে যত বার কেন্দ্র-রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের যৌথ পরিদর্শক দল ব্লাডব্যাঙ্কের অবস্থা দেখতে এসেছে, তত বার অজস্র গলদ তাদের চোখে পড়ছে এবং লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণ আটকে গিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বারবার গুণমানের পরীক্ষায় ফেল করেও, রক্ত সংগ্রহ ও রোগীকে রক্ত দেওয়ার অধিকার থাকে কী করে? ড্রাগ কন্ট্রোলের এক কর্তা জানান, আইনের ফাঁক গলে বেঁচে যাচ্ছে ওই ব্লাডব্যাঙ্ক। কারণ, আইনে রয়েছে সময়মতো কোনও ব্লাডব্যাঙ্ক লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের আবেদন করলে কাজ চালাতে দেওয়া হবে। তবে দফায়-দফায় ড্রাগ কন্ট্রোল পরিদর্শন চালিয়ে যাবে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির থেকে সংগৃহীত ৩০ ইউনিট রক্ত ব্যবহার না করে স্রেফ ফেলে রেখে মেয়াদ-উত্তীর্ণ করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্য দফতর এই ঘটনায় চার জনকে সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু কর্মীদের বড় অংশের অভিযোগ, ‘রাঘববোয়াল’-রা পার পেয়ে যাচ্ছেন, শাস্তির খাঁড়া নামছে চুনোপুঁটিদের উপর। এ বিষয়ে এবং পুনর্নবীকরণ না-হওয়ার বিষয়ে ওই ব্লাডব্যাঙ্কের অধিকর্তা কুমারেশ হালদারকে প্রশ্ন করলে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘আপনারা অসভ্য, আপনাদের সঙ্গে কোনও কথা নয়।’’
তবে কেন্দ্রীয় ব্লাডব্যাঙ্ক নিয়ে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য রয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলের যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ও রক্ত সংরক্ষণের ঘর অতি অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর। রক্ত সংগ্রহের ৬ ঘণ্টার মধ্যে উপাদান (প্লেটলেট, প্লাজমা, আরবিসি প্রভৃতি) পৃথক করতে হয়। কিন্তু এই ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত সংগ্রহ এবং উপাদান ভাগ করার সময় লেখাই থাকছে না। ফলে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে উপাদান ভাগ হওয়ার আশঙ্কা পুরোমাত্রায় থাকছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ও প্লেটলেট যে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা উচিত, তা রাখা হচ্ছে না। ফলে তার মান তলানিতে ঠেকছে। এ ছাড়া, সংগৃহীত রক্তে কোনও ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু এই ব্লাডব্যাঙ্কে প্রতি সপ্তাহে হাতে গোনা কয়েক ইউনিট রক্তের সেই পরীক্ষা হয়। বাকি রক্ত পরীক্ষা ছাড়াই রোগীকে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ড্রাগ কন্ট্রোল আগে হুঁশিয়ারি দিলেও কোনও ফল হয়নি। পরিদর্শকেরা এক টেকনিশিয়ানের নাম করে জানিয়েছিলেন, তিনি কলা বিভাগের স্নাতক অথচ তাঁকে দিয়ে রক্তের উপাদান ভাগ করানো হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। কিন্তু ব্লাডব্যাঙ্কের রোস্টার বলছে, তিনি এখনও নিয়মিত ওই কাজ করছেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি এই ব্লাডব্যাঙ্কের প্রায় ৩০ জন টেকনিশিয়ান তাঁদের সই করা একটি চিঠি দিয়েছেন অধিকর্তাকে। তাতে ব্লাডব্যাঙ্কের বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। ব্লাডব্যাঙ্কে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা কত তৈরি হচ্ছে এবং কতটা বাইরে যাচ্ছে, তার হিসাবে প্রচুর গরমিল রয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া, রক্তের উপাদান তৈরির ইউনিটের প্রধান ধ্রুব মণ্ডলের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওই কাজ করছেন বলে অভিযোগ। টেকনিশিয়ানদের অভিযোগ, তাঁর তৈরি উপাদানের মান অত্যন্ত খারাপ হচ্ছে এবং রোগীর ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে। এ ব্যাপারে ধ্রুববাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।