অঘটন: গভীর রাতের আগুনে পুড়ে গিয়েছে সুভাষনগর রেল বাজারের সব দোকান। শনিবার, দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন লাগোয়া এলাকায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
গভীর রাতের আগুনে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেল গোটা একটি বাজার। শুক্রবার রাত ২টো নাগাদ আগুন লাগে দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন লাগোয়া ওই বাজারে। মোট ১২৫টি দোকানের একটিরও আর অস্তিত্ব নেই। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও সুভাষনগর রেল বাজারকে বাঁচানো যায়নি। তবে দমকলের তৎপরতায় পাশের বাজার এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি বড় বাড়ি রক্ষা পেয়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন দুই ব্যবসায়ীও।
বাজারে আগুন লাগার কারণ অবশ্য শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। শর্ট সার্কিটের পাশাপাশি অন্যান্য কারণের তত্ত্বও উঠে আসছে। তবে ছাই হয়ে যাওয়া বাজার থেকে এখনও কোনও সূত্র মেলেনি। এর পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছেকি না, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সন্দেহ থাকলেও সরাসরি কিছু বলেননি তাঁরা। লকডাউনের পরে ধার-দেনা করে কোনও রকমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন এই বাজারের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আগুনের গ্রাসে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল তাঁদের জীবন। বাজারের বেশির ভাগ দোকানই ছিল আনাজ এবং মাছ-মাংসের। কিছু অন্য দোকানও ছিল।
রেলের জমির ওই বাজারে ব্যবসায়ীদের নতুন করে দোকান গড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ব্যবসায়ীদেরজানান, মুখ্যমন্ত্রী সব রকম ভাবে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। আগে এই বাজারটি ছিল স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে। মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ায় রেলই ব্যবসায়ীদের এখানে পুনর্বাসন দেয়। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তাঁরা আবার এখানেই দোকান দেবেন। পুরনো জায়গায় উঠে যাবেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ঘেঁষা ওই বাজারে রাতে এক জন প্রহরী থাকেন। রাত পৌনে ২টো নাগাদ তিনিই প্রথম আগুন দেখতে পান। মেট্রো স্টেশনের দিকে বাজারের প্রথম দোকানটিতেই প্রথম আগুন লাগে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। নৈশ প্রহরীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ দাস জানান, কিছু ক্ষণের মধ্যেই দমকলের একটিইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। তত ক্ষণে উত্তুরে হাওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাজারে। বাজারের প্রায় সব দোকানেরই কাঠামোবাঁশের। ফলে দমকলের আরও ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলেও বাজারটিকে বাঁচানো যায়নি। অল্প সময়ের মধ্যেই একে একে সব দোকান আগুনের গ্রাসে চলে যায়। সেই সঙ্গেই শুরু হয় দোকানে রাখা এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। তাতে আগুন আশপাশের অন্য দোকানেও ছড়িয়ে পড়ে।
ওই বাজারের পিছনে একটি পাঁচিলের ব্যবধানেই একের পর এক বড় আবাসন। আগুনের তাপে সেই আবাসনগুলির দেওয়াল তেতে ওঠে। আতঙ্কে বাসিন্দারা নীচে নেমে আসেন। আবাসনের কয়েক জন বাসিন্দা ছাদ থেকে জল ছুড়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশেই বিদ্যুতের একটি ট্রান্সফর্মার ছিল। তাতে আগুন লাগলে আবাসনগুলিতেও আগুন ছড়াতে পারত। তবে দমকলের তৎপরতায় আবাসনে আগুন ছড়ায়নি।
যে দোকানে প্রথম আগুন লাগে, তার কয়েকটি দোকান পরেই মুরগির মাংসের দোকান শঙ্কর শীলের। তিনি দোকানেই ঘুমোচ্ছিলেন। চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁর দোকানের পিছন দিকেও আগুন লেগে যায়।
আগুনের তাপ আর ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আতঙ্কে কোনও রকমে ঝাঁপ খুলে বেরোতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান শঙ্করবাবু। বসিরহাটের অনিতা মণ্ডল রোজ রাতের ট্রেনে শাক-আনাজ নিয়ে এসে দোকানেই ঘুমোন। সকালে সে সব বিক্রিকরে বাড়ি ফেরেন। এ দিনও দোকানে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। তাঁর
দোকানের দরজায় আগুন ধরে গেলে কোনও রকমে পিছনের বেড়ার দেওয়াল ভেঙে বাইরে বেরিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন ওই মহিলা।
রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদার। সকালে সেখানে আসেন দুই পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান এবং অন্য কাউন্সিলরেরাও। দু’জনেই জানান, ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে পুরসভা। এলাকার বাসিন্দা, জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তাপস মজুমদার ব্যবসায়ীদের জন্য এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য প্রবীর পাল বলেন,“এলাকার বিধায়কের কথামতো সকালেই পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, ওই বাজারের দোকানগুলি আমরা নতুন করে তৈরি করে দেব।” বেলার দিকে আসেন ব্রাত্য বসু এবংবিদায়ী কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরসভার পক্ষ থেকেই ব্যবসায়ীদের খাবারের ব্যবস্থাকরা হয়। ব্রাত্য ব্যবসায়ীদের বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আপনাদের সব দায়িত্ব আমরা নিলাম। বাজারের দোকান আমরা তৈরি করে দেব। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন ব্যবসায়ীদের খাবারের ব্যবস্থাও আমরাই করব।”