(বাঁ দিকে) সোহিনী চক্রবর্তী। জীতু কমল (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার মেডিক্যাল কলেজে গণ কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। আন্দোলনকারীদের ডাকে এই গণ কনভেনশনে যোগ দেন বাংলা সিনেমা এবং সিরিয়াল জগতের লোকজন-সহ বিশিষ্টেরা। সেই কনভেনশনে যোগ দিয়ে অভিনেত্রী সোহিনী সরকার জানান, এ দেশে তিনি মা হতে চান না। অভিনেতা জীতু কমল জানান, নিজেদের উপর থেকে ক্রমেই বিশ্বাস হারিয়েছে ফেলছেন। যা দেখানো হচ্ছে, তা-ই দেখছেন। মীর আন্দোলনকারীদের ‘রাজনৈতিক ছাতা’ ব্যবহার না করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ওই কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টের সময় মেডিক্যাল কলেজে তারাই গণ কনভেনশনের ডাক দেন। আরজি করের আন্দোলনকারীরা জানান, যে হেতু আরজি করে আধাসামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা রয়েছে, তাই কনভেনশনের অনুমতি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই আরজি করের বদলে মেডিক্যাল কলেজে ওই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। সেখানে যোগ দিয়ে সোহিনী বলেন, ‘‘স্বামীকে বলেছি, এই দেশে মা হতে পারব না। সন্তানকে নিয়ে এসে এই দেশে রেখে দিয়ে যাব? যত ক্ষণ এই দেশে দুর্নীতি রয়েছে, সন্তানকে রেখে দিয়ে যেতে পারব না।’’ বক্তৃতার শুরুতেই সোহিনী জানান, তিনি সাধারণ মানুষ। এখনও পুলিশ দেখলে ভয় পান। এই অবস্থায় তাঁর সঙ্গে রাজনীতির যোগ খুঁজে ট্রোল করা হচ্ছে বলে দাবি সোহিনীর। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু বললেই আমার নামের পাশে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানো হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেও ট্রোল হচ্ছি। জানি না কোন দেশে রয়েছি।’’ আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের তদন্তের জন্য যে সিট গঠন করা হয়েছে, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন সোহিনী। তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘটনা না ঘটলে কেউ তদন্তের কথা বলছিলই না। এত দিন কেন সেটা মাথায় আসেনি?’’
জীতু আবার নাম না করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসুন। জিজ্ঞেস করুন, এমন ঘটনা কেন ঘটল। সিবিআই নিজের কাজ করছে। পুলিশ করতে পারেনি বলে দু’-তিন দিনের মধ্যে সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে তদন্তভার। ‘ভুল করেছি’, পুলিশ মাথা নত করে বলবেন না? আমাদের করের টাকায় মাইনে নিচ্ছেন, উল্টে যুবভারতীর সামনে ১৪৪ ধারা জারি করছেন। এই যে এত শ্রী, সবই তো আমাদের করের টাকায়। জিজ্ঞেস করেছেন কখনও, আমরা এগুলো দিতে চাই কি না?’’ জীতু আঙুল তুলেছেন নাগরিকদের দিকেও। তাঁর কথায়, ‘‘১৪ অগস্ট রাতে রাজ্য, দেশ-বিদেশ জুড়ে যে এত মানুষের ঢল রাস্তায় নামল, তার মানে এই নয় যে রাতারাতি সকলে তৃণমূল থেকে সিপিএম বা বিজেপি হয়ে গেল। তাঁদের ৯০ শতাংশ ভোট দিয়ে আপনাদের নিয়ে এসেছেন। তার মানে দোষ কিছুটা আমাদের উপরেও বর্তায়। আমরা ভয়ের পরিবেশ দেখেও চুপ করে বসে রয়েছি বা ভয় পেয়েই ভোট দিয়ে আসছি।’’ জীতু সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের দিকেও আঙুল তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এ সব ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে কেউ কেউ অর্থ আয় করেছেন। কেন আরজি কর হাসপাতালে আন্দোলনরতদের পাশে গিয়ে সরাসরি দাঁড়াননি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বক্তৃতা শেষে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমার ফোন নম্বর রেখে দিন। যে কোনও প্রয়োজনে আমাকে পাবেন।’’
মীর জানিয়েছেন, এই আন্দোলন এক জন মহিলা, এক জন সহকর্মীর জন্য সংগ্রাম করছেন প্রতিবাদীরা। কোনও ‘রাজনৈতিক ফায়দা বা ভাঁওতা’-র জন্য করছেন না। তিনি এ-ও দাবি করেছেন যে, প্রতি দিন এই আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা চলছে। মানুষ নিজের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে। সেটাও বন্ধ করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বৃষ্টি যতই পড়ুক, রাজনৈতিক ছাতা ব্যবহার করা চলবে না।’’ এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষকেও তিনি কুর্নিশ জানিয়েছেন।