Festivals

সচেতন করতে এ বার মুখ ঢাকবে দুর্গারও! তৈরি রুপোর মাস্ক

শুধু পুজো কমিটিই নয়। শিয়ালদহের দত্ত বাড়ির পুজোতেও এ বার প্রতিমার মুখ ঢাকা থাকবে মাস্কে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০৫:১১
Share:

অবগুণ্ঠন: রুপোর এই মাস্কই পরানো হবে প্রতিমার মুখে। নিজস্ব চিত্র

দশ হাতে সোনার অস্ত্র। সঙ্গে সোনার চোখ, মুকুট, নথ, গয়না। সব মিলিয়ে প্রতিমার জন্য অন্তত খান পঞ্চাশেক গয়না থাকে প্রায় সব পুজো কমিটিরই। এ বার ‘নিউ নর্মাল’-এর অঙ্গ হিসেবে সেই তালিকায় সোনার মাস্ক বা গ্লাভসও ঢুকে পড়বে কি না, তা বুঝে উঠতে পারছেন না পুজো উদ্যোক্তারা। বহু বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রেও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা চলছে, সচেতনতার বার্তা দিতে প্রতিমাকে মাস্ক পরানো হবে কি না, তা নিয়ে।

Advertisement

উত্তর কলকাতার গৌরীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যেরা যেমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের প্রতিমার মুখে থাকবে মাস্ক। সে জন্য ৪১.৮ গ্রামের একটি রুপোর মাস্কও বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। সোমবার, শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে সেই মাস্ক পরা দুর্গা প্রতিমার মুখ সামনে রেখেই খুঁটিপুজো হয়েছে তাঁদের। ওই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মান্টা মিশ্র বলেন, “এ বার আমাদের ৮৭তম বছর। এই মুহূর্তে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকেই এখনও উদাসীন। দেবীর মুখে মাস্ক দেখে যদি তাঁদের হুঁশ হয়!” তবে এ বিষয়ে গত ১৪ অগস্ট সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ায় তড়িঘড়ি মাস্ক বানিয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতার কোনও স্বর্ণকারকেই পাওয়া যায়নি। শেষে বেলঘরিয়ার এক স্বর্ণকার রুপোর মাস্কটি বানান। মান্টাবাবুর দাবি, “একটি মুকুট থেকে রুপোর মাস্কটি তৈরি করানো হয়েছে। মুকুট তো আদতে একটি রক্ষাকবচ। আমরা মনে করছি, মুকুট নয়, মাস্কই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।”

শুধু পুজো কমিটিই নয়। শিয়ালদহের দত্ত বাড়ির পুজোতেও এ বার প্রতিমার মুখ ঢাকা থাকবে মাস্কে। রীতি মেনে অন্য গয়নার মতো বর্ধমানের এক স্বর্ণকারকে মাস্কের বরাতও দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ওই বাড়ির সদস্য দিশা দত্ত। কলেজপড়ুয়া ওই তরুণীর কথায়, “আমাদের ১৬০ বছরের পুজো। মাস্ক নিয়ে সকলে রাজি থাকলেও ৭২ বছরের ঠাকুরমা প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষে বাবা অনেক বুঝিয়ে রাজি করান। সামনের মাসেই প্রতিমার মাস্ক চলে আসবে।” ২৫৮ বছরের পুরনো, আমহার্স্ট স্ট্রিটের চন্দ্রবাড়ির পুজোতেও প্রতিমাকে মাস্ক পরানোর কথা ভাবছেন বাড়ির সদস্যেরা। ওই বাড়ির অন্যতম সদস্য, পেশায় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র বললেন, “মানুষকে সচেতন করতে দুর্গাপুজোর থেকে বড় মঞ্চ হয় না। তাই প্রতিমাকে মাস্ক পরানো গেলে দর্শনার্থীদের কাছেও দারুণ বার্তা দেওয়া যায়।” যদিও ভিন্নমত পোষণ করছেন শোভাবাজার নন্দনবাড়ির সেবায়েত অতনু দত্ত। তাঁর কথায়, “প্রতিমা কি মানুষের মতো হাঁটে! যদি হাঁটত, মাস্ক পরাতাম। ১২০ বছরের পুজো, অনিয়ম করা যাবে না।”

Advertisement

আরও পড়ুন: দমদমে বাড়ির কাছ থেকেই মিলল যুবকের রক্তাক্ত দেহ

প্রতিমার মুখ মাস্কে ঢাকার পক্ষপাতী নন দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশও। তবে এ ব্যাপারে তাঁরাও এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। ওই পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে সুদীপ্ত কুমার বললেন, “আমার মতে, মানুষকে সচেতন করার অনেক উপায় রয়েছে। দুর্গা সকলের উপরে। তাঁকে আমরা কী মাস্ক পরাব!” বাগবাজার সর্বজনীন পুজো কমিটির তরফে সমর পাল বললেন, “আমাদের প্রতিমার ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে মাস্ক পরানো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারিনি। তবে প্রতিমার উচ্চতা প্রতিবার যেমন থাকে, এ বারও তেমনই হবে বলে গত রবিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে।”

হাতিবাগান সর্বজনীনের অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক শ্বাশত বসু অবশ্য মনে করেন, “বহু পুজো কমিটিই এ বার অভিনব কায়দায় মাস্ক বা গ্লাভস ব্যবহার করে চমক দিতে পারে। থিমের মতো এই ব্যাপারটিও গোপন রাখা হচ্ছে। তা ছাড়া এত দিন যা কিছু স্বাভাবিক ছিল, তার ছাপ পুজোয় পড়েছে। তা হলে বর্তমান ‘নিউ নর্মাল’-এর ছাপ কেন পুজোয় দেখা যাবে না?” ত্রিধারা সম্মিলনীর অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা

দেবাশিস কুমারের যুক্তি, “আসলে কেউ দুর্গাকে সর্বশক্তিমান হিসেবে পুজো করেন, কেউ মেয়ের মতো পুজো করেন। মেয়ে হিসেবে ভাবলে তাঁকে করোনা থেকে দূরে রাখতে যে কোনও অভিভাবকই মাস্ক পরাতে চাইবেন।”

একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো উদ্যোক্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যদিও বলেন, “কোনও দুর্ঘটনা, মহামারির ছাপ আমরা প্রতিমার মুখে রাখার পক্ষপাতী নই। তাই মাস্ক পরানোর প্রশ্নই আসে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement