বেপরোয়া: সংক্রমণের তোয়াক্কা না করে মাস্ক ছাড়াই পথে। সোমবার, বরাহনগরের বনহুগলিতে। নিজস্ব চিত্র
এলাকায় ক্রমেই বাড়ছে সংক্রমণ। তা সত্ত্বেও হেলদোল নেই সাধারণ মানুষের। দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে বাজার করা থেকে পাড়ার চায়ের দোকানে আড্ডা, সবই চলছে আগের মতো। অগত্যা সংক্রমণ রুখতে লোকজনের চলাচল থেকে শুরু করে দোকান-বাজারের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিল উত্তর শহরতলির দুই পুরসভা।
বরাহনগর ও কামারহাটি, দুই পুরসভারই কর্তাদের দাবি, ‘‘হাজারো প্রচার সত্ত্বেও কিছু মানুষ কথা শুনছেন না। তাই সংক্রমণ রুখতে গোটা পুর এলাকার জন্যই কিছু নিয়ম চালু করা হচ্ছে। সেই নিয়ম না মানলে স্থানীয় পুলিশকে লকডাউনের বিধিভঙ্গের জন্য জরিমানা-সহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ পুরকর্তাদের বক্তব্য, কড়া দাওয়াই না দিলে ওই সমস্ত লোকজনকে শোধরানো সম্ভব নয়।
বরাহনগর পুর এলাকায় এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৪৫৭। তার মধ্যে শেষ ১৪ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৪২ জন। মৃতের মোট সংখ্যা ১২। অন্য দিকে, কামারহাটি পুর এলাকায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৩৬৮। সুস্থ হয়েছেন ১৪৮ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০০ জন। মৃতের সংখ্যা ২০। পুরকর্তাদের বক্তব্য, এই পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, এলাকায় সংক্রমণ কী হারে ছড়াচ্ছে। তার পরেও কিছু মানুষ নিজের মর্জিমতো চলাফেরা করছেন।
সোমবার বরাহনগর পুরসভার তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, ২২ জুলাই থেকে এলাকার সমস্ত দোকান ও বাজার শুধুমাত্র বেলা ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বেলা ১১টার পরে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় চলাফেরা করা যাবে না। কেউ যদি তার পরে বাইরে বেরোন, তা হলে পুলিশের কাছে তার কারণ দর্শাতে হবে। কারণ জানাতে না পারলে অথবা পুলিশের কাছে তা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে না হলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লকডাউন বিধিভঙ্গের আইনে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ১১টার পর থেকে ওই পুর এলাকার সর্বত্রই সব ধরনের যান চলাচলও বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র বি টি রোড, গোপাললাল ঠাকুর রোড ও পিডব্লিউডি রোডে যান চলাচল করবে।
বরাহনগরের গোপাললাল ঠাকুর রোড, নেতাজি কলোনি, নোয়াপাড়া, বসাকবাগান, তাঁতিপাড়া, বনহুগলি ও টবিন রোডের মতো এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও সেখানে অধিকাংশ লোকজনই নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ। কয়েক দিন আগেই প্রশাসনের তরফে বরাহনগরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের কিছু এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। বাঁশের ব্যারিকেডও বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখানে। বরাহনগর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘মানুষ কথা শুনছেন না। তাই গোটা পুর এলাকাতেই বিধিনিষেধ চালু করা হচ্ছে। পুলিশকেও বলেছি আরও কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে।’’
পথচারী বা অটো-টোটোর চলাচলে এখনই বিধিনিষেধ আরোপ না করলেও বাজার-দোকানের সময় বেঁধে দিয়েছে কামারহাটি পুরসভা। সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত তা খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কামারহাটিতে আটটি বড় বাজার রয়েছে। এ ছাড়া, ফুটপাতেও বাজার বসে। অভিযোগ, আড়িয়াদহ, বেলঘরিয়া, কামারহাটি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বাজারে-দোকানে অযথা ভিড় করছেন লোকজন।
কামারহাটির পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘বাজার ও দোকানের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কী হয়, তা দেখে নিয়ে ফের পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’