ছবি পিটিআই।
স্বাধীনতা দিবসের দিন স্কুলে এসে পতাকা উত্তোলন, তার পরে নানা রকম অনুষ্ঠান এবং সব শেষে মিষ্টিমুখ। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে এ বার স্কুল বন্ধ। বাড়িতেই থাকতে হবে পড়ুয়াদের। তবে প্রতিটি স্কুলই স্বাধীনতা দিবসের দিন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অনলাইনে যে ভাবে ক্লাস হয়, সে ভাবেই পড়ুয়ারা ওই দিন গান, আবৃত্তি করবে কিংবা ছবি এঁকে স্যরকে দেখাবে।
সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলে পতাকা উত্তোলনে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী সবাই যোগ দেন। গত বার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন স্কুলের সাফাইকর্মী। এ বার অবসর নিতে চলা এক শিক্ষক পতাকা তুলবেন। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের কারণে প্রিয় শিক্ষকের পতাকা উত্তোলনের ছবি ও ভিডিয়ো প্রতিটি ক্লাসের হোয়াটসআপ গ্রুপে পোস্ট করা হবে। এ বার প্রতিটি ক্লাসের ছেলেরাই তাদের সেকশনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কেউ গান করছে, কেউ আবৃত্তি। যারা কিছুই করবে না, তাদের অভিভাবকদের কিছু করা অথবা স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হবে।
করোনার পরিবেশে স্বাধীনতা দিবসের সকালে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাতফেরি হচ্ছে না বহু জায়গায়। যাদবপুরের কাটজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের পড়ুয়ারা জানাচ্ছে, প্রতি বছর প্রভাতফেরির পরে এলাকা সাফাই করে তারা। হয় নানা অনুষ্ঠানও। এ বার এসব কিছু না হলেও পড়ুয়াদের মন খারাপ যাতে না হয়, তার জন্য ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যতটা সম্ভব বৈচিত্র আনা হচ্ছে বলে জানালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আখতার। তিনি বলেন, “শুধু ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, এ বার এই করোনার অতিমারির পরিস্থিতিতে ছাত্রদের কী কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে, তা-ও অনলাইনে শিক্ষকেরা স্বাধীনতা দিবসের দিন বলবেন। পড়ুয়াদের মানুষের পাশে থাকার বার্তা দেবেন।”
১৫ অগস্ট শ্রীঅরবিন্দেরও জন্মদিন। তাই স্বাধীনতা দিবস ও ঋষি অরবিন্দের জন্মদিন একসঙ্গে পালন করে বেথুন কলেজিয়েট স্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, “মেয়েরা কেউ স্বাধীনতার উপরে ছবি আঁকবে, কেউ করবে গান, কেউ আবৃত্তি। অনলাইনে স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি ঋষি অরবিন্দকেও স্মরণ করা হবে।”
পড়ুয়ারা স্কুলে না এলেও ২৫ জন প্রাক্তন ছাত্রকে ওই দিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, “করোনার স্বাস্থ্য বিধি মেনে ২৫ জন প্রাক্তনী স্কুলে পতাকা উত্তোলনের সময়ে থাকবেন। প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠান হয়। সেই ঐতিহ্য এ বারেও ভাঙব না। তাই প্রাক্তনীরাই একটি ছোট অনুষ্ঠান করবেন। পতাকা তোলার পর্ব ইউটিউবে লাইভ দেখানো হবে। শিক্ষক ও প্রাক্তনীরা বর্তমান ছাত্রদের বলবেন এই পরিস্থিতিতে তাদের সামাজিক কর্তব্য কী। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার দিন মানুষের পাশে থাকার শপথ নেবে পড়ুয়ারা।”
সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, স্বাধীনতা দিবসে তাদের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান দেখা যাবে ফেসবুক লাইভে। যাঁরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছেন, তাঁদের এই ফেসবুক লাইভ দেখার কথা বলা হয়েছে। ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রিন্সিপাল রঞ্জন মিত্র বলেন, “স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ভার্চুয়াল হবে। ইতিমধ্যে জোর কদমে চলছে মহড়া। বিভিন্ন শ্রেণি বিভিন্ন অনুষ্ঠান করবে। স্কুলের ওয়েবসাইটে লিঙ্ক দিয়ে দেওয়া হবে। পড়ুয়ারা সেখান থেকে দেখে নিতে পারবে।”
তবে পড়ুয়াদের অনেকেই বলছে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে না। অনুষ্ঠানের শেষে মিষ্টির প্যাকেটটাই এ বার আর জুটবে না।