ফাইল চিত্র।
ক্লাস হয়েছে মেরেকেটে সাড়ে তিন মাস। অধিকাংশ স্কুলেই শেষ হয়নি পুরো সিলেবাস। অথচ,আগামী বছরের উচ্চ মাধ্যমিক হবে পুরো পাঠ্যক্রমের উপরেই। তাই টেস্টের পরে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে চাইছে শহরের বেশ কিছু স্কুল।
চলতি বছরে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার পরে স্কুল খুলতে না খুলতেই পড়েগিয়েছিল গরমের ছুটি। সেই ছুটি চলে প্রায় দু’মাস। গ্রীষ্মাবকাশের পরে স্কুল খোলে জুনের শেষ সপ্তাহে। তখন থেকে পুজোর ছুটি পড়া পর্যন্ত, সাকুল্যে সাড়ে তিন মাস সময় পাওয়া গিয়েছিল পঠনপাঠনের জন্য। এ দিকে, পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুললেই হবে টেস্ট। তা হবে পুরো পাঠ্যক্রমের উপরে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরএকাংশ জানাচ্ছে, অনেক স্কুলেই এই সাড়ে তিন মাসে পুরো সিলেবাস শেষ হয়নি। তাদের প্রশ্ন, এই অবস্থায় পুজোর ছুটির পরে স্কুল খোলার কিছু দিনের মধ্যে তারা কী ভাবে টেস্ট দেবে? সাধারণত, টেস্টের পরে আর ক্লাস হয় না। তাই পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্লাসের বন্দোবস্ত না করলে উচ্চ মাধ্যমিকের আগে কোনও ভাবেই পুরো সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়।
বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, “বেশির ভাগ স্কুলেইআগামী বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা এই সমস্যার সম্মুখীন। স্কুলে ক্লাস করার সময় ওরা খুব কম পেল। এক দিকে করোনার জন্য দেরিতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়া, অন্য দিকে দু’মাসের উপরে গরমের ছুটি— এই দুইয়ের কারণে অধিকাংশ স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রম শেষ করা যায়নি। তাই এইপরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস খুব জরুরি।’’ টেস্টের পরে বিশেষ ক্লাস নিলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সুবিধা হবে বলে মনে করেন নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়াও। তিনি জানান, টেস্টের পরে বিশেষ থিয়োরি এবংপ্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করানোর কথা ইতিমধ্যেই তাঁরা পড়ুয়াদের জানিয়ে দিয়েছেন।
বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনার জন্য ২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক হয়নি। চলতি বছরে পরীক্ষা হয়েছে সংক্ষেপিত পাঠ্যক্রমের উপরে। আগামী বছর যারা উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, তারা ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু ওই বছরে মাধ্যমিক হয়নি করোনার কারণে। ফলে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিকই এই ছাত্রছাত্রীদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। তার আগে একটা উৎকণ্ঠা তো আছেই। সেই সঙ্গে যদি পাঠ্যক্রম শেষ না হয়, তা হলে পরীক্ষায় বসার আত্মবিশ্বাসও অনেকের চলে যেতে পারে। অনেক শিক্ষক মনে করছেন, সেই জন্যই দরকার টেস্টের পরে অতিরিক্ত ক্লাস।
কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের মতে, হয়তো কোচিং ক্লাসে সিলেবাস শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সকলের সেখানে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। সেই দিকটিও ভাবা দরকার। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক নেতা নবকুমার কর্মকার বলেন, “কোনও কোনও স্কুল হয়তো নিজেদের উদ্যোগে অতিরিক্ত ক্লাস নেবে। কিন্তু সেটা বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ। শিক্ষা দফতর যদি এই বিষয়ে নির্দেশিকা দিয়ে স্কুলগুলিকে বলে টেস্টের পরে প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে, সব পরীক্ষার্থীই উপকৃত হবে।’’