—প্রতীকী চিত্র।
দু’দিন বাদেই মহালয়া। তবে আর জি কর-কাণ্ডের আবহে এ বার দুর্গাপুজো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ ও উৎসাহ কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই। উৎসব না আন্দোলন— এই ধন্দে এ বছর পুজোর জাঁকজমকে কাটছাঁট করার পথে হাঁটছে শহরের একাধিক পুজো কমিটি। কোথাও উদ্বোধনের জলসা বন্ধ রাখা হচ্ছে, কোথাও বন্ধ হচ্ছে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। এমনকি, একাধিক উৎসব কমিটি পুজোর আয়োজন চূড়ান্ত করলেও বাস্তবে আদৌ সবটা করা যাবে কিনা, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছেন না উদ্যোক্তারা।
ক্যালেন্ডার মেনে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে আর মাত্র কয়েকদিন। যদিও শহর কলকাতায় এখনও উৎসবের সেই আমেজ অনেকটাই অনুপস্থিত। আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীর খুন এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে এখনও আন্দোলনমুখর গোটা শহর। প্রতিদিন শহরের কোথাও না কোথাও আন্দোলন, মিছিল হয়েই চলেছে। প্রতিবাদের জোয়ারে ভাসতে থাকা কলকাতার বুকে এ বার জাঁকজমক করে পুজো করা কতটা সমীচীন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আমজনতার একটা অংশ। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে উৎসবের আয়োজনে কাঁটছাটের পথে হাঁটছে শহরের একাধিক পুজো কমিটি।
প্রতি বছর বড় করে পুজোর উদ্বোধন করলেও এ বছর তার প্রায় কিছুই হবে না বলে জানাচ্ছেন উত্তরের গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা মান্টা মিশ্র। বিসর্জনের শোভাযাত্রাতেও কাটছাঁট করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মান্টা বলেন, ‘‘প্রতি বছর বাইরের লোকজনের পাশাপাশি, এলাকার বিশিষ্টজনকে পুজোর উদ্বোধনে ডাকা হয়। কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমরা এ বছর এসব বন্ধ রাখছি।’’ একই সিদ্ধান্ত কুমোরটুলি পার্ক সর্বজনীনের উদ্যোক্তাদেরও। পুজোর উদ্বোধনে প্রতিবার জলসার আয়োজন করা হয় সেখানে, মেলাও বসে। এ বছর মেলা বসলেও বাইরের শিল্পীদের এনে উদ্বোধনের জলসার আয়োজন করা হচ্ছে না। এমনকি শুধু ঢাক বাজিয়েই প্রতিমা বিসর্জনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অনুপম দাস বললেন, ‘‘সামাজিক পরিস্থিতিকে তো আর অবহেলা করতে পারি না। সীমিত ভাবে যেটুকু করা যায়, তা-ই এ বছর করা হচ্ছে।’’
উদ্বোধন এবং বিসর্জনের জাঁকজমক নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত খিদিরপুর ৭৫ পল্লির উদ্যোক্তারা। অন্য বছরগুলিতে পুজোর মাসখানেক আগেই আয়োজনের সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেও এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই উদ্বোধন এবং বিসর্জন নিয়ে এখনও কিছুই সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য অনুপম সাধুখাঁ জানান, পুজোর প্রস্তুতি চললেও বিসর্জন নিয়ে ধন্দে রয়েছেন তাঁরা। একাধিক বৈঠক হলেও এখনও কিছুই ঠিক হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকজন পুজোর সঙ্গে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিকে জড়াতে চাইছেন না। আবার কয়েকজনের প্রশ্ন, পুজো কী সামাজিক অবস্থার ঊর্ধ্বে? তাই আপাতত পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রাখছি।’’
আয়োজনে কোনও কাটছাঁটের পথে না হাঁটলেও আর জি কর-কাণ্ডের আবহে বার্তা দিতে পুজোকেই বেছে নিতে চাইছে দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির সর্বজনীন। সুরক্ষা না আত্মরক্ষা— এই প্রশ্নে আত্মরক্ষায় জোর দিচ্ছে এই পুজো। উদ্যোক্তা পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘প্রতিবাদে তো আমরা আছিই। সুরক্ষা না আত্মরক্ষা— এ নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা চাই, মেয়েরা আত্মরক্ষায় পারদর্শী হোক। আমাদের এখানে ক্যারাটে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। সেটাই এ বার আমরা পুজোয় সকলের সামনে তুলে ধরব ভেবেছি।’’
যদিও ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘এটা তো পুজো কমিটিগুলির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। চার মাস বা তারও আগে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রতিমার বায়না করতে হয়। সকলের পক্ষে তো সব কিছু দুম করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না।’’