Coronavirus Lockdown

খোঁজ নেই বাড়ি ফেরা বহু মনোরোগীর

বাস্তবে এই নিখোঁজের সংখ্যা হয়তো আরও বেশি‌ বলেই জানাচ্ছে মনোরোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০২:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি

কোভিড এবং আমপানের জোড়া আঘাত সামলাতে নাজেহাল কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষও। কিন্তু জীবনের ছন্দ যাঁদের আগেই কেটেছে, এই বিপর্যয়ের পরে তাঁরা কেমন আছেন, জানা নেই বেশির ভাগের। তাই আমপান আছড়ে পড়ার দু’সপ্তাহ পেরিয়েও নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা আজ়িফা বিবি, টিটাগড়ের জুলি খাতুন, হাওড়ার পাঁচলার রোজ়ি খাতুন, অঙ্কুশ পাত্র, কৃষ্ণা মান্নারা। এঁরা প্রত্যেকেই মনোরোগী, হাসপাতাল থেকে ফিরে পরিবারের সঙ্গে থাকছিলেন।

Advertisement

বাস্তবে এই নিখোঁজের সংখ্যা হয়তো আরও বেশি‌ বলেই জানাচ্ছে মনোরোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কারণ, যে সব মনোরোগীকে নিয়ে ওই সংস্থা কাজ করেছে, তাঁদের অনেকের কাছেই পৌঁছনো যায়নি বলে সংস্থার তরফে জানিয়েছেন শুক্লা দাস বড়ুয়া। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও মানসিক রোগীদের উদ্ধারে সরকারি স্তরে কোনও হেলদোল না থাকার অভিযোগ তুলেছে ওই সংস্থা। তাদের আরও অভিযোগ, এমন দুর্দিনে সর্বস্বান্ত পরিবারগুলির পাশেও দাঁড়াচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। ফলে অঞ্জলি ব্যাপারী, সায়রা খাতুন, মণিমালা সাহা, খাদিজা বিবি, গোপা ঘোষের ভেঙে পড়া ঘর সারাতেও এগিয়ে আসেননি কেউ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির কারও কারও ক্ষেত্রে অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিপর্যস্ত প্রতিবেশীরাই। আমপানের পরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে গিয়ে সে কথা জানতে পারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। আপাতত পাশে দাঁড়িয়েছে তারাই।

এক সময়ে লুম্বিনীতে চিকিৎসাধীন অঞ্জলি কল্যাণীর কাছে মাকে নিয়ে থাকেন। পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান তাঁর মা। লকডাউনে বন্ধ রোজগার, বন্ধ অঞ্জলির চিকিৎসাও। লকডাউনের কারণে রোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটকপুকুরের বাসিন্দা সায়রার ভাই কারিবুল্লার। দীর্ঘদিন পাভলভে চিকিৎসা করানো সায়রা এখন থাকেন মা-ভাইয়ের সঙ্গে। পার্ক সার্কাসের গ্লাভস তৈরির যে কারখানায় কারিবুল্লা কাজ করেন, সেটি বন্ধ থাকায় পরিবারের আট জনের দিন কাটছে অন্যের ভরসায়। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা, মনোরোগী মণিমালার পরিবারে রয়েছেন দৃষ্টিহীন বাবা এবং মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই। তাঁদের মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যেতেও ভরসা করতে হয় এক প্রতিবেশীর উপরে। ঘূর্ণিঝড় এঁদের সকলেরই মাথা গোঁজার আস্তানা ভেঙে দিয়েছে।

Advertisement

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব পার্সনস উইথ ডিজ়েবিলিটিস’ অনুযায়ী, যে কোনও বিপর্যয়ে রাষ্ট্র তার প্রতিবন্ধী নাগরিকের জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেবে। সেটাই হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। উদ্ধারকাজ বা পুনর্বাসনে সাধারণত গুরুত্ব দেওয়া হয় সক্ষমদেরই। এ ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওঁদের অনেকেরই নাগরিকত্ব প্রমাণের নথিও ঝড়জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার মতে, “এমন জোড়া বিপর্যয়ের মুখোমুখি আমরা আগে হইনি। সেটা সামলাতে গিয়ে কিছু ত্রুটি হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিশ্চয়ই সহযোগিতা পাওয়া যাবে।” রত্নাবলীর মন্তব্য, “প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেছি। নিখোঁজদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement