ফিরহাদ হাকিম
নির্বাচনের আগে একাধিক প্রকল্পের উপরে বাড়তি জোর দিয়েছিলেন। বিশেষ করে যে প্রকল্পগুলি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টালবাহানা চলছে। কারণ, এক দিকে সংক্রমণ, অন্য দিকে নির্বাচনের কারণে ইতিমধ্যেই অনেক প্রকল্পের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছিল। তাই সব শর্ত মেনে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম।
কিন্তু তাঁর গ্রেফতারি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির রূপায়ণে বাধা হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে পুর প্রশাসনে। আধিকারিকদের বক্তব্য, করোনা সংক্রমণ রোধ অগ্রাধিকার পেলেও বকেয়া প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে তাড়া দিচ্ছিলেন ফিরহাদ। কিন্তু নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে তাঁর গ্রেফতারি সেই কাজেই ছন্দপতন ঘটিয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘শুধু করোনাই নয়, পুর প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান নিজে হাজির থাকলে পুরসভার অনেক কাজই দ্রুত শেষ হয়।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, বকেয়া প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হল ধাপার প্রকল্প।— যেখানে গল্ফ কোর্স, টেনিস কোর্ট না অন্য কিছু হবে, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ সংস্থার সুপারিশ নিতে আধিকারিকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন ফিরহাদ। সেই মতোই পুরসভার তরফে ধাপার প্রকল্প রূপায়ণের জন্য পরামর্শদাতা বিশেষজ্ঞ সংস্থার খোঁজে দরপত্র ডাকা হয় গত ১৩ মে, বৃহস্পতিবার। দরপত্রে ধাপার যে অংশ (প্রায় ১২.১৪ হেক্টর) রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে বায়ো রেমিডিয়েশন পদ্ধতির (যে প্রক্রিয়ায় সজীব বস্তু বা লিভিং অর্গানিজম ব্যবহার করে মাটি, জল বা কোনও এলাকার দূষণ কমানো হয়) মাধ্যমে দূষণমুক্ত করা হয়েছে, সেখানে ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি রেভিনিউ জেনারেটিং প্রজেক্ট’ রূপায়ণের জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার খোঁজ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থসাহায্য করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তাদের শর্ত, দূষণমুক্ত ওই জমির অংশের বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য তা অন্য কোনও সংস্থার হাতে তুলে দিতে পারবেন না পুর কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ নিজে যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে রাজস্ব আদায়ের প্রকল্প করতে চান, সেটা করতে পারেন। আর এখান থেকেই হর্টিকালচার সেন্টার, বটানিক্যাল সেন্টার, গল্ফ কোর্স, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, টেনিস কোর্ট, বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়া-সহ একাধিক ব্যবস্থা নিয়ে পুর আধিকারিকদের আলোচনা হয়। এক পুরকর্তার বক্তব্য, ‘‘যে মডেলটি পুরসভার পক্ষে সব থেকে লাভজনক হবে, সেটাই এ বিষয়ে গঠিত পুর বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রহণ করা হবে।’’
পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমনিতে ধাপার ওই অংশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ২০০৯-’১০ সাল নাগাদ। জঞ্জালের স্তূপকে বায়ো রেমিডিয়েশন পদ্ধতিতে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে পর্ষদের তরফে। সেখানে মাটি কেটে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তার উপরে এসটিপি শিট, জিয়ো টেক্সটাইল, উদ্ভিদের ‘কভার’ দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনও ভাবে জঞ্জাল নিঃসৃত তরল বা জঞ্জাল থেকে গ্যাস বেরিয়ে এলাকা ফের দূষিত না করতে পারে। নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থিতাবস্থা বজায় রাখার দায়িত্ব পুরসভার। পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, এর আগে এখানে বিনোদন পার্ক, পাখিরালয় তৈরির কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এ বার পরামর্শদাতা বিশেষজ্ঞ সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছিল পুরসভা।
কিন্তু ফিরহাদ হাকিমের গ্রেফতারি সেই উদ্যোগেই জোরদার ধাক্কা দিয়েছে বলে মত পুরসভার। ফলে ধাপায় গল্ফ কোর্স হবে না কি অন্য কিছু, সেই প্রশ্নের উত্তর অন্য আরও একাধিক প্রকল্পের মতোই আপাতত অমীমাংসিত থেকে গেল বলে মনে করছে পুর প্রশাসনের একাংশ।