বানভাসি: (বাঁ দিকে) ভাঙা রাস্তা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে, গিরিশ পার্কের কাছে। (উপরে) ভিআইপি রোডে। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
টানা বৃষ্টির আগাম সতর্কবার্তা দিয়েই রেখেছিল আলিপুর হাওয়া অফিস। সেই মতো বুধবার থেকে শুরু হয়েছিল শ্রাবণের লাগাতার বর্ষণ। যা আজ, শুক্রবার পর্যন্ত চলবে বলে খবর। বৃহস্পতিবারই শহরের জলচিত্র দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত শহরবাসী এবং ট্র্যাফিক পুলিশ। উত্তর থেকে দক্ষিণের বহু রাস্তায় জমা জলের কারণে গাড়ি চলল শম্বুক গতিতে। কোথাও জলে গাড়ি বিকল হয়ে গেল। এমনকি বেহাল রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়লেন বাইকচালক। দিনভর বিপর্যস্ত ট্র্যাফিক সামলাতে কাকভেজা হয়ে হিমশিম খেল পুলিশ।
বেশ কিছু এলাকায় জল বাড়িতে ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তি হল শহরবাসীর একাংশের। এসএসকেএম-সহ বিভিন্ন হাসপাতাল চত্বরে জল জমে যাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে থমকে থাকে গাড়ি। সেই জট ছাড়াতে নাকাল হতে হয় ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীদের। লালবাজার সূত্রের খবর, পরিস্থিতি এমন হয় যে, বেলার দিকে পথে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। এ দিকে, রাত থেকে একটানা অঝোর বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন হয় শহরের বিস্তীর্ণ অংশ।
অথচ, কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বিকেলে দাবি করেছিলেন, ‘‘তেমন বৃষ্টিই হয়নি। কিছু কিছু নিচু জায়গায় জল জমেছে ঠিকই। তবে তা তাড়াতাড়ি সরেও গিয়েছে।’’ আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৭ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদদের মতে, ওই সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাতের এই পরিমাণকে ভারী বৃষ্টিই বলা হয়। শহরে জমা জলের পরিস্থিতি জানতে এ দিন কন্ট্রোল রুমে বসে নজর রাখেন নিকাশির ভারপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক সিংহ। তিনি জানান, জল জমা নিয়ে নতুন করে কিছু করার নেই। জল সরাতে শহরে চারশো পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গায় ঠিকাদারেরা পাম্প বন্ধ রাখছেন। ফলে সমস্যা হয়েছে। এমন ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
বাংলাদেশ উপকূলে অবস্থান করা নিম্নচাপের জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় টানা বৃষ্টির সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেই মতো বুধবার দিনভর হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। তবে বুধবার রাত থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বিরতিহীন ভাবে অঝোরে হয়ে চলে বৃষ্টি।
একটানা বৃষ্টিতে জল জমেছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাধিক জায়গা, পার্ক সার্কাস, এ জে সি বসু রোড, আলিপুর রোড, শেক্সপিয়র সরণি, মহাত্মা গাঁধী রোড, তপসিয়া রোড, বেহালা, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট-সহ বিস্তীর্ণ অংশে। বৃহস্পতিবার রাতেও সেই জল অনেক জায়গা থেকে নামেনি। সকালে ভোগান্তি হয় নিত্যযাত্রীদের। ফেরার সময়ে তা বেড়েছে বই কমেনি। আমতার বাসিন্দা অনিন্দ্য পাত্র মহাত্মা গাঁধী রোডে বাসে বসেই বলছিলেন, ‘‘ঘণ্টাখানেক ধরে বসে আছি। গাড়ির চাকা গড়িয়ে গড়িয়ে চলছে। রাস্তায় জমা জল আর অনবরত বৃষ্টির জন্য কখন বাড়ি পৌঁছতে পারব জানি না।’’
জমা জল আর কিছু রাস্তার বেহাল দশার জন্য গাড়ির গতি থমকেছে ইএম বাইপাস, তারাতলা রোড-সহ শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে এমনিতেই গাড়ির গতি কমে। তার মধ্যে এ দিনের বৃষ্টিতে শহরের বেশ কিছু রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় ট্র্যাফিকের গতিও কম ছিল।’’
এ দিন টানা বৃষ্টিতে জল জমে যায় রাজারহাট-গোপালপুরের কিছু জায়গায়। জল জমে ভিআইপি রোডে বিমানবন্দর থেকে উল্টোডাঙামুখী লেন সংলগ্ন জায়গায়। খাল উপচে জল ঢুকে যায় গৌরাঙ্গনগরে। বিধাননগর পুরসভার দাবি, জল জমলেও পাম্প চালিয়ে দ্রুত তা সরানো হয়েছে।