পথের দাবি: ট্রাম সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ। শনিবার, ধর্মতলা ট্রাম ডিপোর সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কলকাতায় ক্রমেই কমে আসছে ট্রাম চলার পরিসর। যার প্রতিবাদে এ বার একসঙ্গে পথে নামল একাধিক সংগঠন। শনিবার এসপ্লানেড ট্রাম ডিপোয় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ করেন ট্রামপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় একশো জন সদস্য। তাঁদের বক্তব্য, ২০১০ সালে কলকাতায় প্রায় ৩৭টি ট্রাম রুট চালু ছিল। কমবেশি ৩০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন ট্রামে যাতায়াত করতেন। এর পরে বিভিন্ন সময়ে নানা কারণ দেখিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে একের পর এক ট্রাম রুট। রুটের সংখ্যাটা কমতে কমতে বর্তমানে চারে এসে ঠেকেছে।
আমপানের পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এসপ্লানেড-খিদিরপুর রুট। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে যানজটের কারণ দেখিয়ে খিদিরপুর-টালিগঞ্জ রুটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বি বা দী বাগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শুরু হওয়ায় উত্তর কলকাতার বেশির ভাগ রুটই বন্ধ। টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পরে বেলগাছিয়া সেতুর চাপ কমাতে ট্রাম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এ দিন ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার সোসাইটি’ ছাড়াও ‘কলকাতা ক্লিন এয়ার’, ‘পুরনো কলকাতার গল্প’ এবং ‘রেল এনথুজ়িয়্যাস্ট সোসাইটি’র সদস্যেরা বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ট্রামকে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করতে গিয়ে তার ব্যবহারিক দিকটি উপেক্ষা করা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পরিবহণ হিসেবে মেট্রো এবং ইলেকট্রিক বাসের গুরুত্ব বাড়লেও ব্রাত্য করে ফেলা হচ্ছে ট্রামকে। ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার সোসাইটি’র তরফে এ দিন দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের মূলত চারটি দাবি। বন্ধ রুটগুলি পুনরায় চালু করতে হবে, বাসের মতো ট্রামস্টপ তৈরি করতে হবে, নির্দিষ্ট রুটগুলিতে নিয়মিত ব্যবধানে ট্রাম চালাতে হবে এবং চালু রুটগুলির বিভিন্ন সমস্যা মেটাতে হবে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুল বা সেতুর স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে অনেক রুট বন্ধ করা হয়েছে। লাইন সরিয়ে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের অনেকেই ট্রামে উঠতে পারেন না।’’
ফেসবুকে ‘পুরনো কলকাতার গল্প’ নামে একটি গ্রুপ ট্রাম ফেরানোর দাবিতে নিরন্তর প্রচার চালাচ্ছে। ওই গ্রুপের পক্ষ থেকে জয়ন্ত সেন এ দিন বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব পরিবহণে ট্রামের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিসর শহরের স্বার্থেই রক্ষা করা জরুরি।’’ ‘কলকাতা ক্লিন এয়ার’-এর তরফে অজয় মিত্তল বললেন, ‘‘দূষণমুক্ত পরিবেশ নিয়ে যখন এত কথা চলছে, তখন ট্রামকে কী ভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। শহরের পরিবহণ পরিকল্পনার অঙ্গ করা হোক ট্রামকে। নিছক হেরিটেজ করে রেখে লাভ নেই।’’
এ দিন ধর্নায় হাজির ট্রামপ্রেমীদের অনেকেরই মত, রাতের শহরে পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে ট্রাম। বেশি রাতে যে হেতু মেট্রো চলে না এবং বাসের সংখ্যাও কমে যায়, তাই ট্রাম তখন যাত্রীদের সহায় হয়ে উঠতে পারে। এর আগে ট্রামপ্রেমী সংগঠনগুলি কালীঘাট, রাজাবাজার, বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জ-সহ বিভিন্ন ডিপোয় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তবে এসপ্লানেডে একসঙ্গে এমন বিক্ষোভ এই প্রথম। ট্রামকে কী ভাবে পরিবহণ ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ করে তোলা যায়, সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পরিবহণ দফতরে পাঠানো হবে বলে খবর। পাশাপাশি, এ নিয়ে জনমত তৈরি করতেও প্রচার চালানো হবে।
এ দিনের বিক্ষোভ নিয়ে পরিবহণ দফতরের কর্তারা সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তবে ট্রামের গুরুত্বের কথা মানছেন তাঁরাও। ট্রাম রুটের পুনরুদ্ধারে ট্র্যাফিক পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।