গরমে মাটির কলসিতে জল ভরে বাড়ির পথে এক মহিলা। শুক্রবার, উত্তর কলকাতার কলাবাগানে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কোথাও সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। কোথাও সময়টা আরও বেশি। এমনও বেশ কিছু এলাকা রয়েছে, যেখানে মিনিট দশেকের মধ্যেই ১২-১৩ বার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে! কোনও কোনও জায়গায় আবার আলো, পাখা এমন নিভু নিভু অবস্থায় চলেছে যে, দীর্ঘক্ষণ সে সব চালিয়ে রাখতে অনেকেই ভয় পেয়েছেন। কসবায় ট্রান্সমিশন সাব-স্টেশনে আগুন লাগার জেরে বৃহস্পতিবার রাতের পরে শুক্রবারও একই ভাবে ভুগতে হয়েছে শহর ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। অনেকেই সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, প্রাণান্তকর এই তীব্র গরমে আলো-পাখা চালানোর বিদ্যুৎটুকুও কি পাওয়া যাবে না? প্রতি বছর গরম পড়লেই এমন অবস্থা হবে কেন? কেন সরকার এ বার সরাসরি পদক্ষেপ করবে না?
সমাজমাধ্যমে সব চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েছে সিইএসসি এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে। কসবার বাসিন্দা শ্রমণা সাহা যেমন লিখেছেন, ‘১০ মিনিটে ১২ বার বিদ্যুৎ সংযোগ গিয়েছে। শেষেরটা ১০ ঘণ্টার জন্য। কিছুতেই কোথাও অভিযোগ জানাতে পারছি না। সিইএসসি-র নম্বরে ফোন করলে ভুল তথ্য দিয়ে কেটে দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে বয়স্ক মানুষ রয়েছেন, পোষ্যেরা রয়েছে। কোথায় বললে কাজ হবে, বুঝতে না পেরে সমাজমাধ্যমে লিখছি।’ কোয়েলি মিত্র নামে আর এক জন লিখেছেন, ‘৪৫ মিনিট আগেই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। ১৫ মিনিট পরে সংযোগ আসে। কিন্তু ৩০ মিনিটের মধ্যেই আবার চলে যায়। প্রথম বার তবু অভিযোগ জানানো গিয়েছিল। এখন সেটুকুও যাচ্ছে না।’ অভিষেক মিশ্র নামে বৈদ্যবাটীর এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘দেড় ঘণ্টার উপরে বিদ্যুৎহীন বসে আছি। সিইএসসি-তে অভিযোগ করেও সুরাহা মিলছে না।’ সোম চৌধুরী নামে এক জন লিখেছেন, ‘সিইএসসি-কে ধন্যবাদ, এই গরমে আমাদের ঘাম ঝরানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এবং এত ভাল ভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার জন্য।’ আর এক জনের লেখা, ‘এই গরমে আমপানের সময়ের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’ শাশ্বতী বসু নামে আর এক জনের প্রতিক্রিয়া, ‘রাতে রোজই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আজ রাতের মধ্যে সংযোগ না এলে সিইএসসি-র দফতরের গেটের সামনে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানাব।’
পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিপিডিসিএল) এলাকাতেও একই অবস্থা। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে বিধাননগর, নিউ টাউন এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ চলে যায়। তথ্যপ্রযুক্তি তালুকও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য। শুক্রবার সকাল থেকেও একই বিভ্রাট শুরু হয় বেশ কিছু এলাকায়। বিধাননগরের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। কারও মৃত্যু না ঘটলে হয়তো এ ব্যাপারে সরকারের নজর পড়বে না।’’ বাগুইআটির এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ মাসুল দিয়ে যে পরিষেবা পাচ্ছি, তাতে দ্রুত প্রতিবাদে পথে নামা উচিত।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিইএসসি প্রতি বারই বলে, মাত্রাতিরিক্ত গরমে বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এর সঙ্গেই যুক্ত হয়, তাদের না জানিয়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কথা। বিশেষ করে, ‘লোড এক্সটেনশন’ ছাড়াই এসি-র বেলাগাম ব্যবহারের দিকে আঙুল তোলে তারা। আমার প্রশ্ন, যিনি এসি ব্যবহারই করেন না, এই কারণে তিনি ভুগবেন কেন? তা ছাড়া, গরমে চাহিদা বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। তা হলে ঘাটতির কথা কেন স্বীকার করা হয় না সিইএসসি-র তরফে?’’
এ দিন সিইএসসি-র কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কসবায় ২২০ কেভি-র ট্রান্সমিশন সাব-স্টেশনের একটি ট্রান্সফর্মারে বৃহস্পতিবার হঠাৎই আগুন লেগে যায়। তাতেই বিপত্তি বাধে। যে হেতু ওই ট্রান্সমিশন পথ সিইএসসি-ও ব্যবহার করে, তাই তাদের কিছু এলাকাতেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। তবে সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। বিদ্যুৎ দফতরও দাবি করেছে, আগুন লাগার ঘটনা না ঘটলে এই পর্যায়ের সমস্যা হত না। সুভাষগ্রাম থেকে কসবা পর্যন্ত এই সাব-স্টেশনের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়ে গেলে ভবিষ্যতে এ জিনিস আর হবে না। দ্রুত সব দিক থেকেই ভাল ভাবে সবটা সামলে দেওয়া হয়েছে।’’
যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, এই সামলে দেওয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আপাতত প্রাণান্তকর গরমেই ঘিরে ধরছে বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকার ভয়।