তথ্য হাতানোর জন্য কি-প্যাডে লাগানোর স্কিমার। নিজস্ব চিত্র
গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, এটিএম থেকেই কোনও ভাবে ‘স্কিমিং’ করে হ্যাকারেরা টাকা আত্মসাৎ করছে। যে সমস্ত এটিএম থেকে এই টাকা চুরি
চলছে বলে অভিযোগ, সেগুলির অধিকাংশই অরক্ষিত। কলকাতা শহর ঘুরে দেখা গেল, সিংহভাগ এটিএম কাউন্টারেই নিরাপত্তারক্ষীর কোনও বালাই নেই।
বছর দুই আগে দমদমের সেভেন ট্যাঙ্কসের কাছে গ্যাস কাটার দিয়ে এটিএম ভেঙে লুঠ হয়েছিল ৩৪ লক্ষ টাকা। খাস কলকাতায় ওই ভাবে এটিএম লুঠের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। প্রতিটি এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী রাখার দাবি ওঠে গ্রাহকদের তরফে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি এতটুকু বদলায়নি। বুধবার সকালে সেই এটিএম কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল, আজও সেখানে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। দরজা হাট করে খোলা। ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনাও। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অরক্ষিত ওই এটিএমে যে কেউ ঢুকে পড়েন। বৃষ্টি থেকে বাঁচতেও আশ্রয় ওই এটিএম। এমনকি, গরমে বেড়াল-কুকুরও শুয়ে থাকে ওই এটিএমের ভিতরে।
শুধু দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস-ই নয়, উত্তরের শ্যামবাজার, শোভাবাজার থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার ধর্মতলা, পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা অথবা দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ, বেহালা— শহর ঘুরে দেখা গেল, হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বাদবাকি প্রতিটি এটিএম কাউন্টারই রক্ষীবিহীন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অরক্ষিত এটিএম কাউন্টারেই ‘স্কিমিং মেশিন’ লাগানোর সুবিধা সব চেয়ে বেশি। সাইবার-সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তের মতে, ‘‘এটিএমে ঢুকে স্কিমিং মেশিন লাগাতে বড়জোর পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় লাগে। ফলে রক্ষীবিহীন এটিএমে এই সব স্কিমিং মেশিন লাগানো খুবই সহজ।’’ সাইবার-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গ্রাহক যেখানে কার্ড ঢোকান বা যেখানে পিন নম্বর টাইপ করেন, সেখানেই হ্যাকারেরা স্কিমিং মেশিন লাগিয়ে রাখে। গ্রাহকেরা তা বুঝতেই পারেন না। ওই মেশিনই গ্রাহকের কার্ডের তথ্য রেকর্ড করে নেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু নিরাপত্তারক্ষী রাখাই নয়, এটিএমে কী কী করা উচিত নয়, সে বিষয়েও একটি নির্দেশিকা ঝুলিয়ে রাখা উচিত। যেমন, এটিএমে হেলমেট বা চোখে সানগ্লাস পরে ঢোকা যাবে না, মোবাইলে কথা বলতে বলতে ঢোকা যাবে না, একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে এটিএমে ঢুকতে পারবেন না প্রভৃতি। এ সব নির্দেশিকা প্রতিটি এটিএমের দরজায় বা ভিতরে রাখা দরকার। কিন্তু শহরের বেশির ভাগ এটিএমেই এ সবের বালাই নেই।
আরও পড়ুন: ১০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাবেন এটিএম জালিয়াতির শিকার হওয়া গ্রাহকরা
গত কয়েক দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এটিএম থেকে যাঁদের টাকা লোপাট হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, এটিএমে এ রকম কোনও সতর্কবাণী বা নিরাপত্তারক্ষী, কিছুই চোখে পড়েনি। গত ২৯ জুলাই এটিএম থেকে ৪০ হাজার টাকা লোপাট হয়েছে কৌশিক বসুর। তিনি বললেন, ‘‘এ রকম চলতে থাকলে তো আমাদের আবার ব্যাঙ্কে চেক দিয়ে টাকা তোলার সেই আগের ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে।’’ এ দিকে, গত কালের ঘটনার পরে ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠন প্রতিটি এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী রাখার দাবি তুলেছে। এ নিয়ে তারা আগামী ১১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি স্মারকলিপিও দেবে বলে জানিয়েছে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘প্রতিটি এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী রাখার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষকে। তাঁরা জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা করা হবে। এটিএম কাউন্টারে অ্যান্টি-স্কিমিং মেশিন বসানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’