Corona Vaccine

প্রথম সারির যোদ্ধা ওঁরাও, তবু বহু অ্যাম্বুল্যান্স চালক পাননি প্রতিষেধক

তবুও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের জীবন বাঁচানোর কাজ করে চলেছেন শহরের অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৫:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্টিয়ারিং হাতে কার্যত দিন-রাত এক করে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। কখনও পিপিই কিট জুটছে, কখনও জুটছে না। পদে পদে থাকছে সংক্রমণের ঝুঁকি। করোনা অতিমারিতে কোনও কোনও দিন ১৪ ঘণ্টা, আবার কোনও দিন ১৭-১৮ ঘণ্টা পরেও বাড়ি ফেরার সুযোগ মিলছে না। কিন্তু করোনা যুদ্ধে প্রথম থেকেই সামনের সারিতে লড়েও অধিকাংশই এখনও পাননি প্রতিষেধক। তবুও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের জীবন বাঁচানোর কাজ করে চলেছেন শহরের অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা।

Advertisement

করোনা যুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা। অতি সঙ্কটজনক করোনা রোগী থেকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কখনও বাড়ি থেকে হাসপাতাল, আবার কখনও এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে তাঁরাই একমাত্র ভরসা। সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন পরিচালিত অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরাও এই অতিমারিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাঁদের এই কাজের চাপ আরও বেড়েছে। দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। কখনও এক জন রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া মাত্র অন্য রোগীকে নিয়ে আসার জন্য ফোন বেজে উঠছে।

শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে প্রতিষেধক নেওয়ার সুযোগ মিলেছে আগেই। পাশাপাশি শহরের একাধিক নামী বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জানুয়ারির শুরু থেকেই অ্যাম্বুল্যান্স চালক থেকে শুরু করে হাসপাতালের সমস্ত কর্মীদেরই করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন অনেক অ্যাম্বুল্যান্স চালকের অধিকাংশেরই এখনও জোটেনি প্রতিষেধক। আর পাঁচ জনের মতো হাসপাতালে ঘুরেও তাঁরা অনেকেই প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ়ও পাননি।

Advertisement

শহরের চারটি অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক, আনন্দ রায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দু’জন চালক আমার চারটি অ্যাম্বুল্যান্স চালান। গত বছরে আমাদের সে ভাবে করোনা রোগীকে নিতে না হলেও এই বছর প্রতিদিনই বেশ কয়েক জন করোনা রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমাকেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কারও এখনও ভ্যাকসিন জোটেনি। হাসপাতালে গিয়েও ভ্যাকসিন না থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি।’’

গড়িয়ার নাকতলার বাসিন্দা, অমিত দে নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। দিনরাত এক করে করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। কিন্তু কোনও চালকই এখনও করোনা প্রতিষেধক পাননি। নিরুপায় হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’’

মানিকতলা এলাকার এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক আবার বলেন, ‘‘অনেক সময়ে তো বাড়ির লোকেরা রোগী যে করোনায় আক্রান্ত, সেটাই আমাদের জানাচ্ছেন না। ফলে পিপিই কিট না পরেই তখন রোগী নিয়ে যাচ্ছি। পরে জানা যাচ্ছে রোগীর করোনা হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে পরিবারের লোকেদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে দিন দিন।’’

শহরের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন পরিচালিত অ্যাম্বুল্যান্সের চালকদের প্রতিষেধক না পাওয়া যে কোনও সময়ে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। ধীরে ধীরে এই চালকেরা সংক্রমিত হতে থাকলে শহরের রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা কমবে। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন সাধারণ মানুষ। তাই অ্যাম্বুল্যান্সের চালকদের করোনা প্রতিষেধক নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাই বলছেন শহরবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement