মনুয়া মজুমদার ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
তিনি খেলেননি। কিন্তু যাঁরা খেলেছেন, তাঁরা ক’টি বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন, তার হিসেব রেখেছেন নিখুঁত ভাবে। কে কোন ওভারে কতগুলি উইকেট নিয়েছেন, তার পরিসংখ্যান লিখেছেন। কারণ, দমদম সেন্ট্রাল জেলের মহিলা ক্রিকেট লিগের ফাইনালে ‘স্কোরার’ ছিলেন মনুয়া মজুমদার (সিংহ)। স্বামী অনুপম সিংহ হত্যাকাণ্ডে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে এখন কারাবাসী তিনি।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দমদম জেলের পুরুষ এবং মহিলা বন্দিদের ক্রিকেট লিগ হয়। বছরের প্রথম দিন, বুধবার ছিল ফাইনাল। ক্রিকেট নিয়ে মহিলা বন্দিদের উৎসাহ এতটাই বেশি ছিল যে, তাঁরা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আরও একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের আবেদন করেছেন। সেই আবেদনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে মহিলা বন্দিদের নিয়ে আরও একটি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেন কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালের ২ মে বারাসতের হৃদয়পুরে ভ্রমণ সংস্থার কর্মী অনুপম খুন হন। সেই ঘটনায় প্রেমিক অজিত রায়ের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছিলেন মনুয়া। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে সাজা ঘোষণা হয় তাঁর। ‘স্কোরার’-এর পাশাপাশি ক্রিকেট লিগে কার্যত দলের প্রধানের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছে মনুয়াকে। দমদম জেল হাসপাতালে নার্স হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার একদা ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়। ক্রিকেট লিগে আয়োজকের পাশাপাশি ফার্স্ট-এড বক্স আগলে নিয়ে মাঠের পাশে বসেছিলেন তিনি। এক জন খেলোয়াড়ের পায়ের নখ উপড়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে মাঠে গিয়ে তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন দেবযানী। মহিলাদের ক্রিকেটে বিজয়ী হয় পাচারের অভিযোগে কারাগারে থাকা রীনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দল।
পুরুষদের ক্রিকেটে জয়ী হন সেলে থাকা বন্দিদের নিয়ে তৈরি একটি টিম। যেখানে ছিলেন হুগলির একদা ‘ত্রাস’ বলে পরিচিত জিশু। যার ফিল্ডিং দেখে দফায় দফায় হাততালিতে ফেটে পড়ে দমদম জেলের মাঠ। সেই দলে ছিলেন কয়েক দিন আগে জেলে আসা এক খেলোয়াড়। যিনি কলকাতার একটি ক্লাবে নিয়মিত খেলেন বলে খবর। ১৭ রানে জেলকর্মীদের দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সেলের দল। দু’ওভার আগেই জেলকর্মীদের দলের ন’টি উইকেটই পড়ে যায়।
সাধারণত ওয়ার্ডেই থাকেন বন্দিরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বন্দির নিরাপত্তার কারণে সেলে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোনও বন্দিকে শাস্তি হিসেবে সেলে রাখা হয়। তেমনই সেলে থাকা বন্দিদের নিয়ে একটি আলাদা দল ছিল।
নানা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ঘটনার কারণে জেলে ঠাঁই হয় অনেকের। তার মাঝেও ক্রিকেট ঘিরে যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়, তা অভূতপূর্ব বলেই মত জেল কর্তৃপক্ষের। জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘জয় বা পরাজয় বড় কথা নয়। আমাদের বেঁচে থাকার বিভিন্ন স্তরে খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব অনেক লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা জোগায়। নতুন বছরে দমদম জেলের ক্রিকেট লিগ ঘিরে যে উদ্দীপনা সকলের মধ্যে দেখা গিয়েছে, তা সেই পথকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’’