মনুয়া মজুমদার
বন্দিদের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় স্কোরার হিসেবে দায়িত্ব সামলেছে দক্ষতার সঙ্গে। জেলের অন্দরে রেডিয়ো জকি হিসেবেও হাতেখড়ি হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় নাচ যুক্ত হল দমদম জেলে বন্দি মনুয়া মজুমদারের। বাইরের জগতে নিজের প্রতিভা চেনানোর আর সুযোগ না থাকলেও জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে ক্রমেই ডানা মেলছে মনুয়া।
এর আগে দমদম সংশোধনাগারে বন্দি, সারদা-মামলার অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেলের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখা গিয়েছে। তবে সম্প্রতি জেলের বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁকে সে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। বরং ক্রমশ সামনে এসেছে মনুয়া।
২০১৭ সালে বারাসতের হৃদয়পুরের বাসিন্দা অনুপম সিংহের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁর স্ত্রী মনুয়াকে। পরে তার যাবজ্জীবন হয়। রবিবার, নারী দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করে জেলের কর্মী-আধিকারিকদের মন কাড়ল সেই মনুয়া। ছোট থেকেই যে নাচ তার খুব প্রিয়, সে কথা রেডিয়ো জকি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিনেই জানিয়েছিল সে। বলেছিল, ‘‘নাচ খুব পছন্দ করি।’’ এমনকি, স্বামী অনুপম সিংহ হত্যা-কাণ্ডের তদন্তের সময়ে পুলিশি জেরায়ও ওই কথা জানিয়েছিল সে। তাই এ বার জেলের অনুষ্ঠানের মঞ্চে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজের জাত চেনাল মনুয়া। এর আগে জেলের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতে চেয়ে একাধিক বার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল সে। শেষ পর্যন্ত সুযোগ মেলে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে। মনুয়ার সঙ্গে একই মঞ্চে নাচ করে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশের এক মেয়েও।
বন্দিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকলে যেমন একঘেয়েমি কাটে, তেমনই তাদের মানসিক পরিস্থিতিরও বদল ঘটে। তাই দমদম জেলের অন্দরে বন্দিদের মধ্যে গানবাজনার প্রচলন সম্প্রতি আরও বাড়াতে চেয়েছেন কারা কর্তারা। তারই অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলের বন্দিদের মধ্যে গায়কের খোঁজে ‘সুপার সিঙ্গার ইনমেট’ প্রতিযোগিতার বিজয়ী জয়িতা চক্রবর্তীকে নিয়ে আসা হয়েছে দমদম জেলে। এত দিন সে মেদিনীপুর জেলে বন্দি ছিল।
বন্দিদের নিয়ে গানের দল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কারা দফতরের। একাধিক বার বিভিন্ন জায়গায় সেই কথা জানিয়েছিলেন কারামন্ত্রী। এ বার সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই জয়িতাকে দমদম জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে খবর। অন্য বন্দিদের গানের তালিমে জয়িতা সাহায্য করতে পারবে বলে আশাবাদী কারা কর্তারা।
পরিজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কারাগারে ঠাঁই হয় খড়্গপুরের জয়িতার। তবে সুযোগ পেলেই কুঠুরির মধ্যে গানের চর্চা করে সে। সেই চর্চার জোরেই জেলে গায়কদের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল সে। দমদম জেলে নারী দিবসের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জয়িতার গান। তার সঙ্গে গান গায় মিম চক্রবর্তী নামে আর এক বন্দিও।
তবে শুধু মাত্র জেলের অন্দরের অনুষ্ঠানে নয়, কারা দফতরের কর্মীদের অনুষ্ঠানেও এখন ডাক পাচ্ছে জয়িতা। এক কারা কর্তার কথায়, ‘‘এখন তো আর জেল নয়, এটা সংশোধনাগার। তাই সেখানে যাতে বন্দিরা সংশোধিত হন, তাই এই ধরনের অনুষ্ঠান বাড়ানো হচ্ছে। বন্দিদের তো আর তাদের ভাল লাগাকে বহির্জগতের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই নাচ-গান-নাটক চর্চা নিয়ে কোনও বন্দি অনুরোধ করলে তা রাখা হয়।’’