অকুস্থল: শিয়ালদহ উড়ালপুলের এই অংশেই বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় তিন জনের। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মায়ের কোলে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আছে সে। অন্য পাঁচটা দিনের মতোই। কারণ, বাবা যে আর নেই, তা বুঝতে এখনও বহু দেরি দিন পনেরোর শিশুটির। খিদিরপুরের তস্য গলির ভিতরে বাড়ির চারপাশও থমথমে। অচেনা লোকের ভিতরে যাওয়া নিষেধ। কারণ, ওই শিশুর মা নীলমও জানেন না, দশমীর দিনই বেপরোয়া বাস কেড়ে নিয়েছে তাঁর স্বামী রাহুলকুমার প্রসাদকে। ওই একই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন নীলমের বোন অদিতি গুপ্ত (১৮) এবং রাহুলের মামাতো বোন নন্দিনী প্রসাদ (১৭)। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি নীলমের ভাই নীলেশ গুপ্ত এবং দুই মাসতুতো ভাই ঋষি গুপ্ত ও রাহত গুপ্ত।
একটি টেলিকম সংস্থার কর্মী রাহুলের আদি বাড়ি খিদিরপুরের ওই চত্বরেই। তবে বেহালাতেও তাঁদের বাড়ি আছে। সন্তান হওয়ার পরে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন রাহুল। দশমী উপলক্ষে বুধবার দিনভর আনন্দ হয়েছিল শ্বশুরবাড়িতে। রাতের খাবার খেয়ে শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোন রাহুল। প্রতি বছরই বেরোতেন। গভীর রাতে ঠাকুর দেখে ফিরে আসতেন। কিন্তু বুধবার গভীর রাতে পুলিশের যে ফোন গুপ্ত ভবনে এসেছিল, তাতেই বিষাদে বদলে যায় বিজয়ার আনন্দ।
বৃহস্পতিবার খিদিরপুরের কার্ল মার্ক্স সরণির ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গুপ্তদের বাড়ি (গুপ্ত ভবন) ঘিরে রয়েছেন প্রতিবেশীরা। এসেছেন স্থানীয় সমাজকর্মী হিসাবে পরিচিত শেখ শওকত আলি। তাঁরাই জানালেন, নীলম-অদিতির বাবা শিউপূজন গুপ্ত সরকারি কর্মী। অদিতি সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। দিন পনেরো আগে নীলমের সন্তান হয়। সব মিলিয়েই গুপ্ত পরিবারে ছিল খুশির হাওয়া। রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছোটেন শিউপূজন এবং তাঁর কয়েক জন নিকটাত্মীয়। তবে এ দিন দুপুর পর্যন্ত নীলমকে দুর্ঘটনার খবর জানানো হয়নি। সেই কারণেই বাড়ির ভিতরে অচেনা লোকেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন তাঁরা।
বিষাদ, আশঙ্কার পরিবেশ লেক টাউনের বাঙুর অ্যাভিনিউয়ে ঋষি এবং রাহতের বাড়িতেও। তারা ফুলবাগানের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তাদের ঠাকুর্দা রাধেশ্যাম গুপ্ত জানান, দুই নাতি বুধবার সকালে খিদিরপুরে মাসির বাড়িতে গিয়েছিল। এ দিন সকালে ছেলে রাজেশ ফোন করে বাবাকে ঋষি ও রাহতের দুর্ঘটনার কথা জানান। তার পরেই রাধেশ্যাম এবং তাঁর স্ত্রী সীতা নার্সিংহোমে যান। সীতা জানান, রাহতের কানের পাশে গুরুতর চোট লেগেছে। তবে ঋষি অল্প অল্প কথা বলতে পারছে। তার কাছ থেকে সীতা জেনেছেন, পথচারীদের ধাক্কা মারার আগে বাসটি উড়ালপুলের ধারের রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে ঘষটে ঘষটে এগিয়ে আসে। সেই ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি ছিটকে বেরোচ্ছিল। বাসচালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাধেশ্যাম। কেন উড়ালপুল দিয়ে দর্শকদের হাঁটার অনুমতি পুলিশ দিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।