প্রতীকী ছবি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কি না, তা জানা না থাকায় রাতে বাড়িতে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে রাজি হননি চিকিৎসক। রাতভর গড়িয়া মোড়ের বাড়িতেই দেহ পড়ে রয়েছে, শুক্রবার সকালে নেতাজিনগর থানায় এই খবর পৌঁছনোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সৎকারের ব্যবস্থা হয়। একই ভাবে গত বৃহস্পতিবারও অল্প সময়ের মধ্যে একটি দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে নেতাজিনগর থানার পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, সম্প্রতি মৃত্যুর পরে দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে দেহ পড়ে থাকার একাধিক ঘটনা ঘটেছে শহরে। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসন।
তাই এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি বা এসওপি চালু করেছে নেতাজিনগর, ভবানীপুর-সহ বেশ কয়েকটি থানা। সূত্রের খবর, করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ হলে যাতে দ্রুত করোনা পরীক্ষা ও জটিলতা কাটিয়ে সৎকার করা যায়, সে জন্যই ওই পদ্ধতি মেনে কাজ শুরু হয়েছে।
কেমন সে পদ্ধতি? পুলিশ সূত্রের খবর, বেহালা, শ্যামপুকুর-সহ শহরের বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় সৎকারে দেরি হওয়ার ঘটনা ঘটার পরেই নেতাজিনগর থানা প্রথমে ১৫ দফা নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, থানায় মৃত্যু সংক্রান্ত খবর আসা মাত্রই ডিউটি অফিসার, থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসিকে সে বিষয়ে জানাবেন। এর পরে বিস্তারিত ভাবে ডিভিশনাল ডিসি এবং লালবাজার কন্ট্রোল
রুমকে জানাতে হবে। খবর দিতে হবে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরকে, যিনি ওই মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করবেন। পুরসভার করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগের ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে এর পরে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাঁকে ওই মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি পাঠাতে হবে। সেই নথি দেখে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করবেন ওই পুর আধিকারিক। পুলিশ জানিয়েছে, এর পরে সেই সংক্রান্ত সব নথি পাঠাতে হবে লালবাজার কন্ট্রোল রুম এবং কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকেও। এখানেই শেষ নয়, নির্দেশিকা অনুযায়ী এর পরে পুলিশকর্মীরা যোগাযোগ করবেন স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে। মৃতের করোনা রিপোর্ট বা করোনা পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সেই ব্যবস্থা করে দেবেন। এর পরে খবর দেওয়া হবে স্থানীয় বরো কোঅর্ডিনেটরকে। সব শেষে মৃতদেহ সৎকার সংক্রান্ত সমস্ত নথি পাঠাতে হবে লালবাজারে। মৃতদেহ বহনকারী পুরসভার গাড়িকে ধাপায় পাঠানো হলে তবেই নির্দেশিকা অনুযায়ী পুরো কাজ শেষ হবে।
লালবাজার জানিয়েছে, এই সমস্ত ক্ষেত্রে কোথাও মৃতদেহ পুলিশকর্মীদের তোলার কথা নয়। পুলিশের কাজ হল মৃত্যুর খবর পুরসভাকে জানানো। দেহ নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পুরসভারই। কিন্তু দ্রুত খবর না পাওয়ার কারণেই দীর্ঘক্ষণ মৃতদেহ পড়ে থাকার ঘটনা ঘটেছে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতাজিনগর, ভবানীপুর থানা-সহ বেশ কয়েকটি থানা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে দ্রুত দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা যায়। গত দু’দিন এই পদ্ধতিতে কাজ করেই দ্রুত সৎকারের ব্যবস্থা করেছে নেতাজিনগর থানা। ওই থানায় কর্মরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে দেহ পড়ে থাকার ঘটনার পরেই আমাদের থানায় বৈঠক করে ওই এসওপি চালু করেন ওসি সুভাষ অধিকারী। থানার দেওয়ালে ওই এসওপি টাঙানো রয়েছে। তা মেনেই আমরা কাজ করছি।’’
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ওই পদ্ধতিতে পুরসভা, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে দ্রুত তথ্যের আদানপ্রদান হচ্ছে। যার ফলে কাজও দ্রুত হচ্ছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)