এ ভাবেই চলে মার। —নিজস্ব চিত্র।
খাস কলকাতায় আবার পিটুনির ঘটনা। এ বার ঘটনাস্থল শিয়ালদহ। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের সামনে এক যুবককে চোর সন্দেহে পিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। কোনও রকমে আক্রান্তকে উদ্ধার করে নিয়ে যান এক পুলিশকর্মী। ওই যুবককে আটক করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় প্রায়শই পকেটমারি, কেপমারির অভিযোগ ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এনআরএসের সামনে আচমকা এক যুবককে মারধর শুরু করেন এক যুবক। কয়েক জন জুটে যান সেখানে। এক জন বেল্ট দিয়ে মারেন বলেও অভিযোগ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। তিনি অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যান। পুলিশ সূত্রে খবর, চোর সন্দেহে ওই যুবককে মারধর করেন এক ব্যক্তি। অভিযুক্তকে আটক করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বস্তুত, কয়েক দিন ধরে রাজ্যের নানা প্রান্তে চোর, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে। পুলিশি প্রচার চলছে। নিজের হাতে আইন তুলে না-নেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু, তার পরেও এই রকম ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবারই নদিয়ার নবদ্বীপ, কলকাতার উপকণ্ঠে আড়িয়াদহে গণপিটুনির অভিযোগ উঠেছে। খাস কলকাতায় এই নিয়ে গত কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় গণপিটুনির অভিযোগ উঠল।
গত শুক্রবার বৌবাজারের উদয়ন হস্টেলে এক যুবককে মোবাইল চোরের সন্দেহে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। মৃতের নাম ইরশাদ আলম। তিনি চাঁদনি এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। ওই ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের সকলেই হস্টেলের আবাসিক এবং ছাত্র। তাঁদের কারও বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে। কেউ আবার বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের অন্দরে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মনে করেন ‘মাস কাউন্সেলিং’-র প্রয়োজন রয়েছে। গত শনিবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এটা (গণপিটুনির ঘটনা) ক’দিন ধরেই হচ্ছে। বিভিন্ন গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। মানুষ নিজের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। আমি গণপিটুনি দেব কেন? আমার যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তা হলে আমি পুলিশকে জানাব। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে। তদন্ত করবে। যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তা হলে অপরাধীর শাস্তি হবে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আইন নিজের হাতে নেওয়া একটা মারাত্মক বিষয়। কেউ ছেলেধরার নামে মারছে, কেউ ডাইনি অপবাদে মারছে। এখানে দেখলাম, মোবাইল চোর বলে মারছে।’’