প্রতীকী ছবি।
কর্মসূত্রে ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকায় সল্টলেকের বহু বাড়িতেই প্রবীণ দম্পতিদের একলা বসবাস। তাঁদের ভরসা প্রতিবেশীরাই। তেমনই এক দম্পতির ভরসাকে কাজে
লাগিয়ে তাঁদের সর্বস্বান্ত করার অভিযোগ উঠল এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। দম্পতির অজানতে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার সৌগত মিশ্র নামে ওই পড়শিকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার পুলিশ।
বুধবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে সৌগতকে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ পাঁচ দিনের হেফাজত চাইলেও তার হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা থাকায় তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানান আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সল্টলেকের এফই ব্লকের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ও মলি সাহার ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকেন। আশি বছরের বিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথবাবু তাই প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে ভরসা করতেন পড়শি সৌগতকেই। তাঁদের ব্যাঙ্কের পাসবই, সই করা চেকবই সবই রাখা ছিল সৌগতের কাছে।
রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, তাঁর অজানতেই তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘লোকটি আমার প্রতিবেশী। ছ’বছর ধরে যোগাযোগ। প্রথমে এক বার আড়াই লক্ষ টাকা নিয়েছিল। পরে আবার সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা নেয়। বলেছিল খুব প্রয়োজন, আমিও ওর মুখের অবস্থা দেখে টাকা দিয়েছিলাম। আমরা একা থাকি। প্রতিবেশীকে তো ভরসা করতেই হবে।’’
বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় তিন কোটি ৪১ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে অভিযুক্ত। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছে। সেই টাকায় সে ফুর্তি করেছে, ছেলের বিয়েও দিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। তদন্তকারীরা জানান, কিছু টাকা এখনও অন্য কারও কাছে রাখা আছে বলে জানালেও তার পরিচয় এখনও জানায়নি অভিযুক্ত। তবে বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট থেকে সৌগতের অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর প্রমাণ মিলেছে বলে জনিয়েছেন তদন্তকারীরা।
কী ভাবে প্রতারণা করেছে সৌগত? রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, করোনার সময়ে সৌগত তাঁকে জানায়, ব্যাঙ্ক থেকে কম টাকা তোলা যাচ্ছে। কিন্তু তখনও সে মোটা টাকা সরিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘পাসবই দেখতে চাইলেও দেখাত না। পাসবই ফেরতও দিচ্ছিল না। সম্প্রতি নিজে পুলিশের সাহায্যে ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজ নিই। তখনই জানতে পারি, অ্যাকাউন্টের সব টাকা নিয়ে নিয়েছে। এমনকি টাকা তোলার পরে যাতে ব্যাঙ্কের মেসেজ না পাই, তার ব্যবস্থাও করেছিল।’’
সর্বস্ব খুইয়ে আপাতত পেনশনের টাকা দিয়েই সংসার চলছে ওই দম্পতির। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘লোকে জানতে চাইছেন, এত বড় বোকামি কী করে করলাম। কিন্তু একলা বৃদ্ধ-বৃদ্ধার তো মানুষকে ভরসা করার মধ্যে কোনও ভুল নেই।’’