অখুশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কয়েক দিনের ব্যবধানে ই এম বাইপাসের চিংড়িঘাটা ও সংলগ্ন এলাকায় দু’টি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকায় পর পর দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার সরাসরি কলকাতা ও বিধাননগর— দুই কমিশনারেটের পুলিশকেই দুষলেন। এমন অঘটনের পিছনে দুই কমিশনারেটের পুলিশের ‘ইগো’র লড়াই রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৬ নভেম্বর চিংড়িঘাটায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ি কয়েক জন পথচারীকে ধাক্কা মারে। তাতে এক জনের মৃত্যু হয়। আহত হন কয়েক জন। এর দশ দিন পরে মঙ্গলবার, চিংড়িঘাটার অদূরেই সুকান্তনগরের কাছে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক বাইক আরোহীর। আহত হন চালক।
বুধবার মধ্যমগ্রামে ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকারও। বৈঠকের মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী তোপ দাগেন বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে। তিনি জানতে চান, ‘‘চিংড়িঘাটায় এত দুর্ঘটনা ঘটে কেন?’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘তোমাদের নিজেদের ইগোর জন্য মানুষ ভুক্তভোগী হবে কেন? রাস্তার ওইটুকু তো অংশ। সেটা নিয়েও কলকাতা পুলিশ আর বিধাননগর পুলিশের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি হবে কেন?’’ দুই কমিশনারেটকে একসঙ্গে বসে সমস্যা মেটাতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘তোমরা সমস্যা মেটাবে। আর একটাও যেন দুর্ঘটনা ওখানে না ঘটে।’’
উল্লেখ্য, চিংড়িঘাটা মোড়ের ওই দিকেই ২০১৮ সালে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা দুই ছাত্রের। সেই ঘটনাতেও দুই কমিশনারেটের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি প্রকাশ্যে আসে। ওই জায়গায় একটি সেতু তৈরির কথা বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহকে বলা হয়েছিল বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এক কথা কত বার মনে করাতে হবে! এক জন পুলিশ থাকবেন, এক জন চলে যাবেন। মানুষকে ভুগতে হবে কেন?’’ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী চান দুর্ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ তৎপর হোক। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো ও ট্র্যাফিক আইন না মানার অনিয়ম ঠেকাতে সুপরিকল্পিত ভাবে পুলিশ কাজ করুক।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পরেই চিংড়িঘাটা এলাকায় পরিদর্শনে যান বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার-সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা। সেখানে যান কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যও। পরে দুই কমিশনারেটের পুলিশ বৈঠকও করে।
সূত্রের খবর, চিংড়িঘাটা উড়ালপুলে ওঠার আগে থেকে খাল পর্যন্ত ইএম বাইপাসের প্রায় ৬০০ মিটার অংশ বিধাননগর কমিশনারেটের বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার অধীন। ওই এলাকায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থার দেখাশোনা করে কলকাতা পুলিশ। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিজি এ সব নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন। সূত্রের দাবি, ওই গোটা এলাকাটি কলকাতা পুলিশের হাতে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। কারণ, একই কমিশনারেটের অধীনে থাকলে সমন্বয়ের অভাব হবে না বলেই পুলিশের একটি অংশের দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকার যান নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনা রোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তাদের থেকে ঘটনাস্থলেই জানতে চান ডিজি। দুর্ঘটনা ঠেকাতে তিনি কলকাতা পুলিশকে লিখিত প্রস্তাব জমা দিতে বলেন। এ দিন ওই এলাকায় অন্য দিনের তুলনায় বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অন্য দিকে, ৬ নভেম্বরের ঘটনায় অভিযুক্ত চালক চিরতোষ রায়কে এ দিন ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা হলে তাঁর জামিন হয়।