কানে কানে: পুজোর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ও মেয়র। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
পুজোয় রাস্তা আটকে মণ্ডপ হয়। আমজনতার অভিজ্ঞতা, পুজো শেষ হওয়ার পরেও মণ্ডপ খোলা হয় না। রাস্তা জুড়ে পড়ে থাকে ফ্লেক্স, ব্যানার, হোর্ডিং। কিন্তু এ বার শহরে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ। তাই বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে পুজো, মহরম, ইদুজ্জোহার সমন্বয় সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, অক্টোবরের পাঁচ তারিখের মধ্যে মণ্ডপ, ব্যানার, হোর্ডিং সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, আট তারিখ শুরু বিশ্বকাপ। কালীপুজোর পরে ফাইনাল। তাই সে ক্ষেত্রেও তড়িঘড়ি মণ্ডপ খুলে ফেলতে বলা হবে বলে তিনি জানান।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, বিদেশ থেকে অনেকে আসবেন। তাই শহর নোংরা হয়ে থাকলে ভাল দেখাবে না। বস্তুত, পুজোর আগে থেকেই বিদেশিরা আসতে শুরু করবেন। তাই উৎসবের সময়ে রাস্তাঘাট সাফসুতরো রাখতে বলেছেন তিনি। এ বার পুজো ও মহরম গায়ে গায়ে প়ড়েছে। দুই সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান যাতে শান্তিতে মেটে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি ক্লাবগুলিকেও সক্রিয় হতে বলেন তিনি। মমতার হুঁশিয়ারি, ওই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ালে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
এ বার পয়লা অক্টোবর, একাদশীর দিন মহরম। তাই দশমীর দিন সন্ধ্যা ছ’টার পরে বিসর্জন বন্ধ হবে। একাদশীর দিন বিসর্জন হবে না। তাই বিসর্জনের সময়সীমা এক দিন বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া যাবে। তার আগে ৩ অক্টোবর রেড রো়ডে সরকারি ‘দুর্গা প্যারেড’ হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান।
এ দিন নবান্নে ফিফা-র সঙ্গে বৈঠক ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখান থেকে তাঁর সঙ্গেই সমন্বয় বৈঠকে যান ফিফা-র কর্তারা। সেখানে টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর জেভিয়ার সিপি পুজো কমিটিগুলিকে বলেন, ‘‘বাংলা মানে ফিশ, ফেস্টিভ্যাল এবং ফুটবল। আপনাদের কাছে আর্জি, ফেস্টিভ্যালে ফুটবলকে তুলে ধরুন।’’ তিনি জানান, যে সব ক্লাব ফুটবলের প্রচার করবে, তাদের কথা ও ছবি ফিফা নিজের ওয়েবসাইটে প্রচার করবে। পরে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকেই ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন, কলকাতা, দমদম এবং সল্টলেকের সব পুজো কমিটিকে দু’টি করে ফুটবল দিতে হবে। বিশ্বকাপকে তুলে ধরতে ক্লাবগুলি মণ্ডপের সামনে ফুটবল রেখে দেবে। এর বাইরেও ফুটবলকে প্রচার দেওয়া যায় কি না, ভেবে দেখতে বলেছেন তিনি।
ফিফা-র প্রতিনিধি এবং শহরে আসা বিদেশিদেরও এ বার পুজো দেখার বিশেষ সুযোগ দিতে বলেছে সরকার। পুলিশ তার ব্যবস্থা করবে। পুজো উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর কর্তারা বলেন, ফিফা-র প্রতিনিধি ও বিদেশিদের ৩৫০টি পুজোয় ভিআইপি গেট দিয়ে ঢোকানোর ব্যবস্থা রাখা হবে।
২০১১ থেকে এই সমন্বয় সভা চালু করেছে প্রশাসন। ফি-বছরই পুজো কমিটিগুলিকে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলকাতা পুরসভা ২০০টি ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য করবে। কলকাতা পুলিশ ৭০টি পুজোকে সাহায্য করবে। সিইএসসি বিদ্যুতের দামে ২০ শতাংশ ছাড় দেবে বলেও তিনি জানান। শুধু তা-ই নয়, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পকে সামনে রেখে এ বার বিশেষ পুরস্কার চালু করছে লালবাজার। পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানান, পুজোয় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পের প্রচার করছে, এমন তিনটি পুজোকে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২৫ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে।