Majherhat bridge

সেতু চালু, তবু থেমে যাওয়া বাসের চাকা গড়াল কই

এমনই দু’টি রুট ৩ডি এবং ৩ডি/১। উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনি থেকে মাঝেরহাট সেতু পেরিয়ে এই দু’টি বাস আগে যেত বেহালার দিকে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৪৬
Share:

থমকে: বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনিতে পরপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দীর্ঘ দু’বছর তিন মাস পরে নবরূপে উদ্বোধন হয়েছে মাঝেরহাট সেতুর। কিন্তু সেতু ভেঙে পড়ার পরে থমকে যাওয়া বহু রুটের বাসের চাকা ফের গড়াচ্ছে তো? রবিবার, সেতু উদ্বোধনের তিন দিনের মাথায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেতু খুললেও গতি-হারা বহু রুটেই গতি ফেরেনি। কেউ সেতু উদ্বোধনের পরের দু’দিন, অর্থাৎ শুক্র এবং শনিবার বাস চালানোর চেষ্টা করলেও যাত্রী না পেয়ে রবিবার থেকে পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ আবার সেতু খুললেও আর সুদিন ফেরার আশা না করে বাসের রুট-নম্বরই বদলে ফেলেছেন!

Advertisement

এমনই দু’টি রুট ৩ডি এবং ৩ডি/১। উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনি থেকে মাঝেরহাট সেতু পেরিয়ে এই দু’টি বাস আগে যেত বেহালার দিকে। ৩ডি রুটের বাসটি যেত শ্যামবাজার, এ পি সি রোড, শিয়ালদহ, ধর্মতলা, খিদিরপুর হয়ে। ৩ডি/১ শ্যামবাজার, শিয়ালদহ, ধর্মতলা থেকে বেহালার দিকে যেত রবীন্দ্র সদন এবং ভবানী ভবন হয়ে। কিন্তু সেতু ভেঙে পড়ার পরে ওই দু’টি রুটের বাস ফিরে আসছিল মোমিনপুর থেকেই। আনলক-পর্বে সব চালু হলেও সেই যাত্রাপথও বন্ধ করে দেন মালিকপক্ষ। মাঝেরহাট সেতু চালু হওয়ার পরের দিন তাঁরা নয়া উদ্যমে ৩ডি/১ রুটের চারটি বাস চালালেও শনিবার চালান মাত্র একটি। রবিবার ওই রুটে কোনও বাসই চলেনি।

মিল্ক কলোনিতে ওই রুটের ডিপোয় গিয়ে দেখা গেল, বাসের গায়ে ৩ডি এবং ৩ডি/১ রুট নম্বর লেখা থাকলেও সেগুলি চলছে সামনে ৩বি রুটের প্লেট লাগিয়ে। রুটের টাইম কিপার পার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাঝেরহাট সেতু চালু হলেও যাত্রী হচ্ছে না। ৩ডি বা ৩ডি/১ রুট শেষ। মালিকেরা তাই ৩বি রুটে বাস চালাচ্ছেন।’’ তাঁর হিসেব, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার আগে ৩ডি বা ৩ডি/১ রুটে দৈনিক গড়ে ৫৫-৬০টি বাস চলত। সেতু ভাঙার পরে সেই সংখ্যা কমলেও কোনও মতে

Advertisement

আরও পড়ুন: ৫ লাখের তালিকায় দেশের অষ্টম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, তবে কমছে সক্রিয় রোগী

রুটটি চালু ছিল। কিন্তু আনলক-পর্বে ওই রুট আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখন ৩বি রুটে চলে ৩৪টির মতো বাস। রুটের আর এক টাইম কিপার কমলেশ রায়ের দাবি, ‘‘রুট না চলার খাঁড়া আমাদের উপরেই পড়ছে। গত জানুয়ারিতে পাঁচ জন টাইম কিপারকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মাসিক বেতন আট হাজার টাকা। মালিকপক্ষ সম্প্রতি জানিয়েছেন, মাসে ২৮০০ টাকায় কাজ করতে না পারলে ছেড়ে দিন।এর বেশি বেতন দেওয়া যাবে না।’’

আরও পড়ুন: ‘ভারত বন্‌ধ’এর দিন ছেড়ে বুধবার রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি নড্ডা

প্রায় একই দাবি ২২২ নম্বর রুটের বাসচালকদেরও। ডানলপ-বনহুগলি থেকে খিদিরপুর হয়ে মাঝেরহাট সেতু ধরে ওই বাস যেত বেহালা চৌরাস্তা। সেতু বিপর্যয়ের পরে এই রুটেরও চাকা থমকে গিয়েছিল। সেতু চালু হওয়ার পরে মালিকপক্ষ নতুন করে গাড়ি নামানোর তোড়জোড় করলেও প্রথম দু’দিনের অভিজ্ঞতার পরে পিছু হটেছেন। ওই রুটের এক বাসচালক নিমাই হালদারের দাবি, ‘‘চালাব কাদের নিয়ে? যাত্রীই তো নেই। আমাদেরও অনেককে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, একই ভাবে ধুঁকছে শখেরবাজার-পৈলান থেকে হাওড়াগামী ১২সি, সরশুনা-হাওড়া ১২সি/১, আমতলা-সল্টলেক ২৩৫, বড়িশা-শিলপাড়া থেকে শিয়ালদহগামী ২১ বা শিরাকোল-মুকুন্দপুর এসডি১৬-র মতো রুটের বাসগুলি।

জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট‌্‌্সের সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সেতু ভাঙার পরে করোনার ধাক্কা। বাড়তি রাস্তা ঘুরে কম যাত্রী বহন করে রুটগুলো প্রায় উঠে যেতে বসেছিল। মাঝেরহাট সেতু তৈরি হয়ে যাওয়ায় বাড়তি রাস্তা ঘোরার ঝক্কি কমল বটে, কিন্তু রুটগুলো বাঁচল কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।’’

তা হলে উপায়?

আপাতত সেতু বিপর্যয় পেরিয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টাই সম্বল বাস রুটগুলির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement