সারিবদ্ধ: তীব্র রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ঘোড়াদের। মঙ্গলবার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
জ্বালা ধরানো রোদে সওয়ারিকে ঘুরিয়ে আনার পরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়াল ঘোড়ার গাড়ি। সওয়ারির সঙ্গে ‘হিসাবপত্তর’ বুঝে নিয়েই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলেন সেই গাড়ির মালিক। চোখে-মুখে জল দিয়ে গাছের ছায়ায় বসতেই পাশে বসা এক জন ধমক দিয়ে উঠলেন, ‘‘নিজে গাছের ছায়ায় বসে আরাম করছিস, আর ঘোড়া দুটোকে ওই ভাবে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছিস? ওরা মরলে তোর পেট চলবে তো?’’ ধমক শুনেই কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে ঘোড়া দুটোকে খুলে গাছের তলায় বাঁধলেন ওই যুবক।
ময়দান এলাকার ঘোড়াদের বেহাল অবস্থা নিয়ে এর আগে চর্চা কম হয়নি। বিভিন্ন সময়ে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে একাধিক প্রশ্নও উঠেছে। ওই ঘোড়াদের প্রয়োজনীয় যত্ন না নিয়েই যে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাটানো হয়, এমন অভিযোগও নতুন নয়। তাতেও অবশ্য পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। এ বার অভিযোগ, এই অসহনীয় গরমেও ঘোড়াদের স্বাস্থ্যের পরোয়া না করে তাদের যথেচ্ছ ভাবে খাটানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়েও রাখা হচ্ছে।
যদিও ময়দান এলাকার ঘোড়ার গাড়ির চালকেরা দাবি করছেন, ঘোড়াদের প্রয়োজনীয় যত্ন নিচ্ছেন তাঁরা। গরমের কথা মাথায় রেখে ঘোড়াদের প্রতিদিন স্নান করানো থেকে ভেজা কাপড়ে গোটা শরীর পরিষ্কার করানো— সবই করা হচ্ছে। এমনকি, সওয়ারিদের ঘুরিয়ে আনার পরে ঘোড়াদের গাছের ছায়ায় রেখে বিশ্রামও দেওয়া হচ্ছে।
মালিকেরা ঘোড়াদের যত্ন নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে দেখা গেল, সওয়ারি পেলে রোদের পরোয়া না করেই ছোটানো হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ভিক্টোরিয়ার সামনে ঘোড়ার গাড়ির এক চালক বললেন, ‘‘এই গরমে তো সওয়ারি মিলছে না। যেটুকু ব্যবসা হচ্ছে, ভোরের দিকে আর বিকেলে। এ বার কেউ যদি দুপুরে এসে ঘোড়ার গাড়ি চড়তে চান, তা হলে কী করব বলুন? ঘোড়ারও যেমন পেট চালাতে হয়, আমাদেরও তো এই করেই পেট চলে।’’
পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোদের মধ্যে দীর্ঘ সময় পোষ্যকে রাখলে ‘হিট স্ট্রোক’ হতে পারে। ঘোড়াদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা বহু গুণ বেশি। পশু চিকিৎসক দীপককুমার দে বললেন, ‘‘চল্লিশ ছুঁইছুঁই গরমে ঘোড়াদের যে কোনও সময়ে হিট স্ট্রোক হতে পারে। তাই খুব বেশি গরমে ওদের রোদে বার না করাই ভাল। যদি প্রয়োজনে বার করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর গ্লুকোজ় খাওয়ানো দরকার। তবে রোদ থেকে ঘুরিয়ে এনে সঙ্গে সঙ্গে জল দেওয়া চলবে না।’’ চিকিৎসকেরা এমন পরামর্শ দিলেও সে কথা শুনছে কে!