দুর্ঘটনা: লরির ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে অটোটি। সুশান্ত দাসের (ইনসেটে)। বুধবার, বেলেঘাটায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
সকাল সকাল অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন বেলেঘাটা মেন রোডের বাসিন্দা সুশান্ত দাস। বুধবার বাড়ি থেকে বেরোনোর পরেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না তাঁর। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শিবু সেন নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে অটো সারাইয়ের কাজ করানোর সময়েই তাতে ধাক্কা মারে দ্রুত গতিতে আসা একটি লরি! অটো-সহ দু’জনকেই খানিকটা হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে থামে লরিটি। বেলেঘাটা থানার পুলিশ লরিটিকে আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে লরির চালককে।
কাগজের বাক্সের মতো দুমড়ে যাওয়া অটো থেকে সুশান্ত এবং শিবুকে উদ্ধার করে এন আর এস হাসপাতালে নিয়ে যান প্রত্যক্ষদর্শীরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত ঘোষণা করা হয় বছর তিপ্পান্নর সুশান্তকে। শিবু সঙ্কটজনক অবস্থায় সেখানেই চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর বাঁ হাতের হাড় বেরিয়ে এসেছে। ডান পায়ের গোড়ালির অংশও নেই। তবে সুশান্তের মতো তাঁর মাথায় আঘাত লাগেনি। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় চালক জানিয়েছেন, ওই সময়ে ঘুমে তাঁর চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, বেলেঘাটা-শিয়ালদহ রুটে সুশান্ত অটো চালাতেন। ৯৩/এইচ/৩৩/১ বেলেঘাটা রোডের বাড়িতে স্ত্রী রুনু, পুত্র তাপস এবং বাবা-মাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মাস দু’য়েকের মধ্যে ছেলেরও বিয়ে হওয়ার কথা। প্রতিদিনের মতো এ দিনও ভোরে অটো নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। সুশান্তদের অটো ইউনিয়নের নেতা রাজা জয়সওয়াল জানান, চাউলপট্টি রোডের উপরে তাঁদের অটো স্ট্যান্ডের কাছেই একটি গণ শৌচালয় রয়েছে। তার পাশের খানিকটা ফাঁকা জায়গায় অটোর মেরামতি করান তাঁরা। এ দিনও সেখানেই কাজ করাচ্ছিলেন সুশান্ত।
মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। বুধবার, বেলেঘাটায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের গাড়ির বৈদ্যুতিক কোনও সমস্যা হলে শিবুদা দেখে দেন। সুশান্তদার গাড়ি চালু করতে কয়েক দিন ধরে সমস্যা হচ্ছিল। অটোর পিছনের দিকের অংশ খুলে এ দিন সেটাই দেখছিলেন শিবুদা। আর চালকের আসনে বসে অটোটি চালু করার চেষ্টা করছিলেন সুশান্তদা। সেই সময়ই সামনে থেকে অটোয় ধাক্কা মারে লরিটি।’’ এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ‘‘লরি তখন ইএম বাইপাসের দিকে যাচ্ছিল। লরিটি এতটাই জোরে আসছিল যে, ধাক্কা মারার পরে অটোটিকে বেশ খানিকটা হিঁচড়ে নিয়ে যায়। পরে লরি নিয়ে পালানোরও চেষ্টা করেন চালক। তবে অন্য অটোচালকেরা ধরে ফেলেন।’’ প্রদীপ দত্ত নামে অটো ইউনিয়নের আরও এক জন জানিয়েছেন, আহতদের কাউকেই অটো থেকে বার করা যাচ্ছিল না। অটোচালকেরাই কোনও মতে দুমড়ে যাওয়া অটোর লোহা কেটে তবেই দু’জনকে বার করে হাসপাতালে পাঠান।
এ দিন ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, শৌচালয়ের দেওয়ালে তখনও রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। লরি এবং অটোর চাপে দেওয়ালের কিছুটা অংশের সিমেন্টও খসে গিয়েছে। ঘটনার পরে এলাকায় বাড়তি পুলিশকর্মীও মোতায়েন করা হয়েছে। সুশান্তবাবুদের টালির চালের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, দুঃসংবাদ পেয়ে তত ক্ষণে ভিড় করেছেন অনেকে। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই সুশান্তবাবুর স্ত্রী। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা সুনীলবাবু হাত জোড় করে বলেন, ‘‘নাতিটার দু’মাসের মধ্যে বিয়ে। ছেলেটাই চলে গেল! একা কী করে সব করব?’’