প্রতীকী ছবি।
এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরোনোর ঘটনা!
হাওড়ার ব্যাঁটরায় একটি লোহার গুদামে প্রায় এক কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে হাওয়ালা-চক্রের হদিস পেয়েছে। যা নিয়ে প্রবল শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুলিশ মহলে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, জিএসটি ফাঁকি এবং কালো টাকা সাদা করার জন্য তৈরি হওয়া এই চক্রের উপরে বাটপাড়ি করতেই এক কোটি টাকা লুট করেছে দুষ্কৃতীরা। এবং পুরো ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে এই ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত অন্য তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, শীঘ্রই চক্রের মাথাদের ধরা হবে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার হেস্টিংসের বাসিন্দা গিরিধর দাস মুন্দ্রা ও হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডের সুনীল শর্মা পরস্পরের বন্ধু এবং দু’জনেই লোহার ব্যবসায়ী। পুলিশের দাবি, সম্প্রতি দু’জনেরই ব্যবসায় মন্দা চলছিল। তাই লাভের আশায় জিএসটি ফাঁকি দিতে ও কালো টাকা সাদা করতে হাওয়ালার মতো ব্যবসায়িক লেনদেনে নামেন তাঁরা। হিসাবের খাতায় সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে না দেখিয়ে লাভের টাকা ঘরে তুলতে চেয়েছিলেন ও দু’জন। লক্ষ্য ছিল, ১০০ টাকার বিনিময়ে ৩৫ টাকা লাভ করা। সেই লভ্যাংশ দুই বন্ধু ভাগ করে নেবেন— এমনটাই ঠিক হয়। সেই মতো দালালদের দিয়ে টাকা লেনদেনের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। এর জন্য ওই দুই ব্যবসায়ী এই কাজে দক্ষ তিন দালালকে হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা ও বরাহনগর থেকে নিয়োগ করেছিলেন।
পুলিশ জানায়, এই কাজের দায়িত্ব পাওয়ার পরে ওই তিন দালাল আবার ছক কষে যে, এই কাজে মধ্যস্থতাকারী (যাকে এই চক্রের ‘মেন্টর’ বলা হয়। এদের কাজ মূলত টাকার অঙ্ক ঠিক আছে কি না, তা গুনে দেখা) হিসাবে যাকে নিয়োগ করা হবে, তার দায়িত্ব হবে ব্যবসায়ীদের কালো টাকা আত্মসাৎ করে ভাগ করে নেওয়া! এর জন্য পরিকল্পনা করেই তারা হাওড়ার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব দেয়। তার পরেই তৈরি হয়েছিল ডাকাতির ছক।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন ওই দুষ্কৃতী হাওড়া ময়দান এলাকা থেকে এক হাজার টাকায় একটি অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া নিয়ে তিন সশস্ত্র দুষ্কৃতীকে বেলিলিয়াস রোডের ওই লোহার গুদামে নিয়ে আসে। এর পরে সে গিরিধর ও সুনীলকে জানায়, টাকা গুনতে গুদামের দোতলার অফিসে যাবে তার সঙ্গে আসা তিন জন।
পুলিশ জানায়, সুনীলের অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তিন দুষ্কৃতী প্রথমে তাঁর সঙ্গে দেখা করে। তখন তারা কিছুই করেনি। বরং দেখা গিয়েছে, চেয়ারে বসে সুনীলের সঙ্গে গল্পগুজব করছে তারা। এমনকি, পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক সুনীলও সমস্ত টাকা বার করে টেবিলের উপরে রাখেন গুনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আচমকাই তিন দুষ্কৃতী বোমা ও রিভলভার বার করে স্বমূর্তি ধারণ করায় হতভম্ব হয়ে যান সুনীল। চটপট তাঁকে ধরে হাত-মুখ বেঁধে ফেলে দুষ্কৃতীরা। এর পরে রিভলভার উঁচিয়ে টাকা নিয়ে পালায়।
পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে বুধবার ভোরে প্রথমেই এই চক্রের তিন দালাল— বালির বাসিন্দা শিবরাম চক্রবর্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার ননীগোপাল দাস এবং বরাহনগরের বিশ্বজিৎ দাসকে আটক করা হয়। এ দিন দুপুরে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সুনীল। এর পরে পুলিশ ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার ও লুট হওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের হাওয়ালা-চক্রের সন্ধান হাওড়ায় এই প্রথম পাওয়া গেল। চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। কিছু দিন আগে বিধাননগরে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স এ রকম একটি ঘটনার তদন্তে নেমে কয়েক জনকে ধরেছিল। হাওড়ায় এমন চক্র আর কোথায় সক্রিয়, দেখা হচ্ছে।’’ ওই দুই ব্যবসায়ীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।