সকালে নিউ টাউনে কাকলি ঘোষদস্তিদার। (ডান দিকে) বিকেলে সল্টলেকে সব্যসাচী দত্ত। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ঘামঝরা গরমে কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি নিরুত্তাপই ছিল বারাসত লোকসভার ভোট। বেলায় উত্তাপের পারদ অন্য মাত্রা নিল তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার ও বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের পারস্পরিক দোষারোপে। যদিও ভোটের একেবারে শেষ মুহূর্তে সল্টলেকে দেখা গেল উল্টো ছবি। দু’জনে মুখোমুখি হলেন। কুশল বিনিময়ের পরে কাকলিকে আইসক্রিম কিনে দেন সব্যসাচী। তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয় বিধাননগরের মেয়রকে। সব্যসাচী বলেন, ‘‘দ্বন্দ্ব কিছু নেই। আমি আসলে সুবক্তা নই। মঞ্চে অত বক্তৃতা দিতে পারি না। তবে দলের জন্য যা কাজ করার, করছি।’’ আর বিদায়ী সাংসদের জবাব, ‘‘কোনও দ্বন্দ্ব নেই। ও আমার সহকর্মী।’’ আইসক্রিম কিনে দেওয়া কি শুধুই মিষ্টিমুখ করানোর জন্য? সব্যসাচীর উত্তর, ‘‘আসলে আমি বরাবরই সকলকে দিয়ে খেতে ভালবাসি। কোনও দিন একা কিছু খাই না।’’
ভোট শুরুর পরে অবশ্য অন্য মেজাজে দেখা গিয়েছিল বিদায়ী সাংসদকে। বিজেপির সঙ্গে পক্ষপাতিত্ব করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, এই অভিযোগ তুলে রবিবার এক বার দেগঙ্গায় অভিযোগ জানান কাকলি। পরে নিউ টাউন থানায় ধর্নায় বসেন। কাকলির অভিযোগ, ‘‘বিজেপির হয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আমাদের ভোটারদের মারধর করেছে। জয় শ্রী রাম ধ্বনি তুলে, ক্যাম্প অফিস ভেঙে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিঁড়েছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘ওঁরা ভাল ভাবে ভোট পরিচালনা করেছেন। মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুস্থ ভাবে ভোট হয়েছে।’’ এ দিন দেগঙ্গায় এক প্রশ্নের উত্তরে কাকলির পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘‘হু ইজ সব্যসাচী?’’ তা নিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘হতেই পারে। ব্যস্ততার মধ্যে হয়তো আমাকে ভুলে গিয়েছেন।’’
নিউ টাউন থানায় ধর্নায় বসা প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। উনি নিশ্চয়ই কিছু বেআইনি মনে করেছেন, তাই ধর্নায় বসেছেন। কিন্তু থানাটা তো রাজ্য সরকারের। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তাঁর বিরুদ্ধে উনি নিশ্চয়ই ধর্নায় বসবেন না।’’ এ প্রসঙ্গে কাকলি পরে বলেন, ‘‘আমি সারা দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি। কে তার কী মানে করলেন, আমি কী ভাবে বলব?’’
কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে নিউ টাউন থানায় কেন? কাকলি বলেন, ‘‘এ দিন নিউ টাউনের একটি বুথে গিয়ে দেখি, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রভাবিত করছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। আমি যেতেই ভোটারেরা এ নিয়ে ক্ষোভ জানান। বিষয়টি নিয়ে আমি দলের উপরমহলে কথা বলি। আমাকে বলা হয় নিউ টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে।’’
শেষ দফার ভোটে দিনভর উত্তপ্ত ছিল দেগঙ্গা এবং শাসন। কোথাও শাসক দলের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, কোথাও বিজেপি সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে আধাসেনার বিরুদ্ধে। চলেছে আধাসেনার গাড়ি ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি, পাল্টা লাঠিচার্জ, বিজেপির পথ অবরোধ। এ দিন দেগঙ্গার গিলেবাড়ির ৬৬ ও ৬৭ নম্বর বুথে বোমাবাজির অভিযোগ তোলে বিজেপি। সেখানকারই নুরনগর পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুরে ১০৩ নম্বর বুথে বিজেপির এজেন্টকে মারধর করে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
শাসনের চক আমিনপুরে অভিযোগ ওঠে, বিজেপি-কে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রভাবিত করছে আধা সামরিক বাহিনী। প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থকেরা। আধাসেনা গিয়ে লাঠি চালানো শুরু করলে তেতে ওঠে পরিস্থিতি। দেগঙ্গার রামনগর দাসপাড়ার দু’টি বুথে বিজেপি এজেন্টদের মারধরের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।