দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ। —নিজস্ব চিত্র
রাজনৈতিক প্রচারে বায়ুদূষণের প্রসঙ্গ উহ্য কেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন শহরের নাগরিকদের একাংশ। এ বার রাজনৈতিক দলগুলির এই ‘নীরবতা’ নিয়ে তাদের চিঠি দিলেন চিকিৎসকদের একটি সংগঠনও। চিঠিতে বায়ুদূষণকে নির্বাচনী প্রচারের অংশ করা হোক, এই আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলই চিঠির উত্তর দেয়নি বলে ওই সংগঠন সূত্রের খবর।
বায়ুদূষণ যে বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছচ্ছে ক্রমশ, তা নিয়ে এর আগেই সরব হয়েছিল ‘ডক্টর্স ফর ক্লিন এয়ার’ নামে চিকিৎসকদের ওই সংগঠন। সংগঠনের সদস্যদের একাংশ জানাচ্ছেন, ক্রমাগত বায়ুদূষণ নিয়ে লেখালেখির ফলে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তাই কিছু দিন আগেই সংগঠনের তরফে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন জানানো হয়। সংগঠনের সদস্য, বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধর বলছেন, ‘‘নির্বাচনী ইস্তেহার, নির্বাচনী প্রচারে উল্লেখ করার জন্য আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আবেদন করেছি। বলেছি, অনুগ্রহ করে বিষয়টি প্রচারের অংশ করুন। কিন্তু কোনও দলই এখনও উত্তর দেয়নি।’’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি— সব দলই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট সংগঠনে সারা দেশের ৫০ জনের মতো বক্ষরোগ চিকিৎসক-সদস্য রয়েছেন। সকলেই বায়ুদূষণের বিপদ সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দূষণের কারণে শহরের বাতাসের মান যে খারাপ হয়েছে, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাও যে ভাবে বাড়ছে, তাতেও পুরো বিষয়টা পরিষ্কার। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলির এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ‘নীরব’ থাকাটা মোটেই শ্রেয় নয়। এক বক্ষরোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, বিষয়টি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গুরুত্ব পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তা হয়নি! কয়েকটি দল নির্বাচনী ইস্তেহারে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলেছে। কিন্তু শুধু ইস্তেহারে এটা সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের সময়ে বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সেটা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এমনটাই বলছেন নাগরিকদের একাংশও। জনপ্রতিনিধি প্রচারে এসেছেন, কিন্তু বায়ুদূষণ নিয়ে একটিও কথা নেই। কেন প্রচার থেকে দূষণকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে তাঁর কাছে সরাসরি জানতে চেয়েছিলেন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এক বহুতল আবাসনের বাসিন্দারা। কারণ, ধুলোর দূষণে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল ওই আবাসনের বাসিন্দাদের। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, আবাসনের বাচ্চাদের খেলতে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। ওই আবাসনের বাসিন্দা রায়ান ঘোষাল বলছেন, ‘‘আমরা সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম ওই প্রার্থীকে। কিন্তু তিনি এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি! বায়ুদূষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী করে লোকসভা নির্বাচনে প্রাধান্য পাচ্ছে না, সেটাই তো বুঝতে পারছি না!’’
দক্ষিণ কলকাতার কাঁকুলিয়া রোডের বাসিন্দা অসীম মুখোপাধ্যায় ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা সব সময়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তাঁদের সে চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে শহরের দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায়। অসীমবাবুর ছেলে কালীচরণ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রচারে বায়ুদূষণকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। আমাদের মতো পরিবারের জন্য বটেই, সকলের জন্যই বায়ুদূষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়াটা খুবই দরকার। নির্বাচনে প্রচারের পরিসরটা অনেক বড় থাকে, সেখানে যদি এ বিষয়টি উল্লেখ করা হত, তা হলে ভাল হত।’’