পাখির চোখে হাওড়া ব্রিজ।—নিজস্ব চিত্র।
কেমন আছে কলকাতা? লকডাউনে কতটা মনমরা ‘সিটি অব জয়’?
বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি, মেট্রো, অটো আর মিছিলের নগরী কলকাতা। ‘তিনশো বছর বুকে নিয়ে’ পথ চলা এই শহর আগে এই ছবি দেখেনি কখনও। ইতিহাসে নেই এমন ঘরবন্দি মহানগরের জীবনগাথা। আচমকাই যেন থেমে গিয়েছে তিলোত্তমার প্রাণ। পাড়ার মোড়ে, বাজারে, কিংবা ওষুধের দোকানে বেরিয়ে সেই জনশূন্য শহরের রাজপথের খানিকটা আঁচ হয়তো পাচ্ছেন, তবে সেটা একটা অংশমাত্র। সম্পূর্ণ চিত্রটা আরও মন কেমন করা।
গড়িয়াহাটের মোড়ে এই সময় প্রতি বার জমে ওঠে চৈত্র সেলের বাজার। হকারদের হাঁকাহাঁকি আর ক্রেতাদের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। পার্কসার্কাস সেভেন পয়েন্টে গাড়ির চাপে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় লাল, সবুজ হলুদ সিগন্যাল গুলোও। বাবুঘাটের লঞ্চগুলিতে ভিড়ের চাপে ডুবুডুবু অবস্থা থাকে বারো মাস। ধর্মতলা চত্বরে কত যে যান আর অগুনতি মানুষ, তার হিসেব থাকে না। বাইপাস, মা উড়ালপুলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলে গাড়িদের সারি। পাঁচ দিকের যানবাহনের চাপে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের যানজটে কত ক্ষণ যে আটকে থাকতে হয়, তার ইয়ত্তা থাকে না।
আরও পড়ুন: বিকেলের তথ্য ভুল, রাজ্যে আক্রান্ত ৩৪, মৃত ৩: মুখ্যসচিব
চেনা এই শহরেই সর্বত্র অচেনা ছবি। চলতে চলতে ক্লান্ত গাড়িরা ছুটি নিয়েছে রাস্তা থেকে। কর্মব্যস্ততার স্বভাবসিদ্ধ চাঞ্চল্য নেই। সকালের দিকে বাজারে, ওষুধ-মুদি দোকানে সামান্য ভিড় হলেও বেলা বাড়তেই ঘরবন্দি মহানগর। বুকের ভিতরে কয়েক লক্ষ লোক প্রতি দিন যে হাওড়া-শিয়ালদহে নামিয়ে দিয়ে যেত এবং ফিরিয়ে নিয়ে যেত যে ট্রেনগুলি, তারা সব স্তব্ধ। খাঁ খাঁ করছে শহরের দুই প্রবেশদ্বার। এই নিরব, নিস্তব্ধতায় একটাই পাওয়া, দূষণহীন নির্মল বাতাস। আর বহু ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে চলা তিলোত্তমা দেখল বিরল এক নৈশব্দের ইতিহাস। নজিরবিহীন শূন্যতার ইতিহাস।
আরও পড়ুন: স্কুলে কোয়রান্টিন সেন্টার, শুনেই আতঙ্কে পথ অবরোধে নিউটাউনের বাসিন্দারা
ভিডিয়ো: অর্চিষ্মান সাহা।