ফাইল চিত্র
রাস্তা ফাঁকা। লোকজনের ভিড় নেই। গাড়ি চলাচলের শব্দ নেই। ফলে ভয় কমেছে ওদের মনেও। তাই কলকাতা শহরের রাস্তায় দিনেদুপুরেই দেখা মিলছে শেয়াল কিংবা ভামেদের। একই অবস্থা শহরতলিতেও। তবে লোকালয়ে ঢুকে বন্যপ্রাণীগুলি কোনও ভাবে যাতে মানুষের আক্রমণের শিকার না হয়, তা নিয়ে রাজ্য বন দফতর শহরবাসীকে সতর্ক করেছে।
রাজ্য বন দফতর সূত্রের খবর, রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন সাদার্ন অ্যাভিনিউ, হেস্টিংস, বিধাননগর, গল্ফ ক্লাব এলাকা, পাটুলি, আনন্দপুর, গড়িয়া অঞ্চলে শেয়ালের দেখা মিলছে। এ ছাড়াও বটানিক্যাল গার্ডেনের আশপাশের রাস্তাতেও শেয়ালের দেখা মিলেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা বন দফতরকে জানিয়েছেন। আধিকারিকেরা জানান, কলকাতা এবং তার আশপাশে অনেক দিন ধরেই শেয়াল রয়েছে। মাঝেমধ্যে ফাঁকা জায়গায় তাদের দেখা যায়। মূলত মানুষের ভয়ে তারা ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। সেখান থেকেই তারা ইঁদুর বা ছোট পশুপাখি শিকার করে।
কোথায় কত সংখ্যক শেয়াল দেখা গিয়েছে, বনকর্মীরা তার হিসেব রাখার চেষ্টা করছেন। তাঁরা জানান, শেয়ালের পাশাপাশি শহর এবং শহরতলিতে প্রচুর সংখ্যায় ভামও দেখা যাচ্ছে। এমনকি ভামের সংখ্যা বেড়েছে বলেই বন দফতরের কাছে খবর।
রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউনের পর থেকেই হঠাৎ করে রাস্তায় শেয়াল, ভাম দেখা যাচ্ছে বলে খবর এসেছে। রাস্তা ফাঁকা থাকার ফলেই এই ধরনের প্রাণীর দেখা মিলেছে। আমরা বিষয়টির উপরে নজর রাখতে বলেছি।”
বন দফতর মনে করছে, রাস্তা জনশূন্য হওয়ার প্রাণীগুলি বেরিয়ে পড়ছে। বাইরে যত বেশি জায়গায় তারা ঘুরতে পারবে, তত বেশি তারা শিকারের সুযোগ পাবে। মানুষ না থাকায় তারা রাজপথে অনেকটাই নিরাপদ বলে মনে করছে বন দফতর।
জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-র বিজ্ঞানী রাধেশ্যাম মৃধা বলেন, ‘‘বর্তমান লকডাউনের পরিস্থিতিতে অনেক জায়গাতেই বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। শুধু কলকাতাতেই নয় কেরলেও দিনের বেলা রাজপথে প্রচুর শেয়াল ঘুরছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেক রাজ্যে রাস্তায় দিনেদুপুরে প্যাঙ্গোলিনেরও দেখা মিলেছে। আরও কী কী বন্যপ্রাণী এই সময়ে দেখা গিয়েছে তার তালিকা তৈরি করে গবেষণা করা প্রয়োজন।’’
তিনি জানান, যে কোনও প্রাণী মানুষকে ভয় পায়। যে সব জায়গায় জনসমাগম বেশি, সেখানে তারা আসে না। এ ছাড়াও, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে শব্দদূষণে ওই প্রাণীরা খুবই কষ্ট পায়। সেই কারণেই ঝোপঝাড়, বনজঙ্গল, যেখানে শব্দের দৌরাত্ম্য অপেক্ষাকৃত কম, এমন জায়গাকেই তারা থাকার জন্য বেছে নেয়। লকডাউনের ফলে শব্দদূষণ কমে যাওয়ায় তারা বাইরে বেরিয়ে আসার সাহস পাচ্ছে বলে মনে করেন রাধেশ্যামবাবু।