দিনভর: রাতেও নেভেনি ওই বাড়ির আগুন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
বাইরে থেকে দোতলার গুদামে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে চার দিক। তিনতলা থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছে। সেখানে মহিলারা-সহ আটকে পড়েছেন বেশ কয়েক জন।
সেই চিৎকার শুনেই এগিয়ে এলেন মহম্মদ করিম, আমির, মহম্মদ জামাদ, মহম্মদ সোনু-সহ অনেকে। তিনতলার ঘরগুলি থেকে লোকজনকে বার করে আনেন তাঁরাই।
ধোঁয়ায় দেখা যাচ্ছে না কিছু। মাঝেমধ্যে আগুনের শিখা বেরিয়ে আসছে। ভেঙে পড়ছে পুড়ে যাওয়া অংশ। এর মধ্যেই যেন এক ঝলক টাটকা বাতাস ওই পাড়ার যুবকেরা। সোমবার কলুটোলা স্ট্রিটে আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় তখন ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই। হইচই, চিৎকার চলছে চার দিকে। সে সবের মধ্যেই দমকল আসার আগে আগুন নেভানোর কাজে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা।
খানিক পরে দমকলকর্মীরা এসে কাজ শুরু করলেও আগুন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। বাড়ির দোতলা থেকে আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে তিনতলায়। আমির, জামাদ, সোনুরা অপেক্ষা না করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েন। বিভিন্ন সামগ্রী সরানো থেকে শুরু করে দমকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগুনের সঙ্গে লড়াই শুরু করেন তাঁরাও।
সকালে দমকলকর্মীদের সাহায্য করেন স্থানীয় যুবকেরাও। নিজস্ব চিত্র।
দোতলার গুদামের এক দিক লোহার গ্রিল ও কাচ দিয়ে ঢাকা, অন্য প্রান্ত শাটার দিয়ে আটকানো। ফলে ভিতরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল দমকলকর্মীদের। যা দেখে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্থানীয়দের একাংশ। দমকলকর্মীদের ঘিরে ধরে প্রবল হইচই জুড়ে দেন তাঁরা। ইতিমধ্যে দমকলের দু’টি গাড়ির জল শেষ হয়ে যায়। কলুটোলা স্ট্রিটে তখন একের পর এক দমকলের গাড়ি ভিড় করছে।
কিন্তু আগুন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। উল্টো দিকের একটি ধর্মীয় স্থান থেকে জলের ব্যবস্থা করা হয়। সে সময়ে দেখা যায়, দমকলের মই নিয়ে বিপদের ঝুঁকি সত্ত্বেও দোতলায় উঠে যান এক যুবক। হাতুড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে জানলার কাচ ভেঙে দেন তিনি। রাস্তা থেকে তখন সকলে চিৎকার করে তাঁকে নেমে আসতে বলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সইফুল জানান, গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন আরও বড় আকার নিয়েছিল। ওই অবস্থায় দোতলায় উঠলে বড়সড় বিপদ হতে পারত। কিন্তু অকুতোভয় ওই যুবক পরপর কাচ ভেঙে তবেই নীচে নেমে আসেন। এর পরে সেই পথেই জল দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেন দমকলকর্মীরা। তাঁরাও ওই যুবকদের প্রশংসা করেন।
এখানেই শেষ নয়। বাড়ির ভিতরে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ছে এবং বাড়ির কোনও কোনও অংশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছে, তখনও জলের পাইপ কাঁধে করে নিয়ে দমকলকর্মীদের সাহায্যে এগিয়ে যান সোনুরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, দমকল এলেও কাজের কাজ হচ্ছিল না। আগুন বেড়েই চলেছিল। এক জনের কথায়, ‘‘ওই অবস্থায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারছিলাম না। চোখের সামনে সব পুড়ে যাচ্ছে।’’
ভয় লাগেনি?
অকুতোভয় সোনুর জবাব, ‘‘কিসের ভয়! নিজেদের লোকজন বিপদে পড়েছে। ভয়ে পেলে কি আর বাঁচানো যেত?’’