অমিল জরুরি পরিষেবা, নজর সুইমিং পুলে

স্থানীয় সূত্রের খবর, বেহালার ওই অংশে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। তা মেটাতে প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে সেই কাজ এখনও বাকি। বেহালার নন্দনপল্লির মিলনমেলার বিপুল ব্যয়ের এই সুইমিং পুলটির পরিকল্পনা শুরু ২০১৫ সালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০১:৫২
Share:

প্রায় আড়াই কোটি টাকার সুইমিং পুলের প্রস্তাব নিয়ে ঘুরছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। —ফাইল চিত্র।

ঢাকা দেওয়া নিকাশি নালা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে নোংরা জলে টইটম্বুর নালা উপচিয়ে অল্প বৃষ্টিতেই ভাসিয়ে দেয় রাস্তা। এখনও এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তা পাকাই হয়নি। অভিযোগ, সেই পরিষেবার উন্নতিতে নজর নেই, অথচ পুরসভার পাখির চোখ আটকে রয়েছে এলাকারই একটি সুইমিং পুল তৈরি করার পরিকল্পনায়। তাই গত তিন বছর ধরে প্রায় আড়াই কোটি টাকার সুইমিং পুলের প্রস্তাব নিয়ে ঘুরছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এমনই ছবি কলকাতা পুরসভার ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, বেহালার ওই অংশে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। তা মেটাতে প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে সেই কাজ এখনও বাকি। বেহালার নন্দনপল্লির মিলনমেলার বিপুল ব্যয়ের এই সুইমিং পুলটির পরিকল্পনা শুরু ২০১৫ সালে। কিন্তু আড়াই কোটি টাকার পুল তৈরির সম্মতিতে সিলমোহর পড়েনি। অবশেষে পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে সেই প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সুইমিং পুলের প্রস্তাব পাশ হয়েছে ঠিকই, তবে এই দাবি তো নতুন নয়!

পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা গিয়েছে, ২৫ মিটার বাই ১৫ মিটারের একটি সুইমিং পুল তৈরি করতে খরচ পড়ে আশি লক্ষ থেকে দেড় কোটি টাকা। তিন বছর আগে বাগবাজারের নিবেদিতা উদ্যানে ওই একই মাপের সুইমিং পুল করতে খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা। পুরসভা সূত্রের খবর, মিলনমেলার সুইমিং পুলও ওই মাপের হবে।

Advertisement

তবে এ ক্ষেত্রে কেন এত খরচ? পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের ফলে এত বেশি খরচ হচ্ছে বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

পুরসভা সূত্রের খবর, কেইআইআইপি প্রকল্পে এলাকার ভূর্গভস্থ নিকাশির কাজ বোসপাড়া রোড, বিদ্যাসাগর সরণি, ঠাকুরতলা-সহ পাঁচটি রাস্তায় শুরু হয়েছে। যার মাধ্যমে এলাকার মাত্র তিরিশ শতাংশ এলাকা পরিকল্পিত নিকাশির আওতায় আসবে। চোঙারবন এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তা যেমন কৈলাস ঘোষ রোড, শরৎচন্দ্র রোড, প্রশান্ত রায় রোড, ঈশান ঘোষ রোড এখনও পর্যন্ত পাকা হয়নি। ভূর্গভস্থ নিকাশির কাজ শেষ হলে এলাকায় জল জমার সমস্যা থাকবে না।

বাসিন্দাদের মতে, ‘‘একটা সুইমিং পুল করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে, তা দিয়ে এই জরুরি পরিষেবাগুলোর ব্যবস্থা করা যেত।’’ যদিও এক পুর আধিকারিকের মন্তব্য, গ্রিন সিটি প্রকল্পের টাকায় হচ্ছে ওই কাজ। ওই প্রকল্পের অধীনে কেবলমাত্র পার্ক সংস্কার, সবুজায়ন এবং সুইমিং পুলই তৈরি করা সম্ভব। অন্য কোনও কাজ নয়।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, সুইমিং পুলটির কাঠামো তৈরি করতে খরচ বরাদ্দ হয়েছে ১ কোটি ৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা। পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা করতে খরচ ধরা হয়েছে ৮ লক্ষ ২২ হাজার ৩৩ টাকা। এ ছাড়াও ধার্য হয়েছে বিদ্যুৎ, সৌন্দর্যায়ন-সহ অন্য কাজের খরচ। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত সুইমিং পুলের জন্য ২ কোটি ৩৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

পুর কর্তৃপক্ষ জানান, অন্য সুইমিং পুলের ক্ষেত্রে পুরসভা নিজেই করেছে কাজ। তাই খরচও কম হয়েছে। কিন্তু নন্দনপল্লির যেখানে সুইমিং পুল তৈরির প্রস্তাব রয়েছে, সেখানে পুল তৈরি করার পরিকাঠামো পুরসভার নেই। তাই এই বাড়তি খরচ।
স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের সুদীপ পোল্লের যুক্তি, ‘‘সুইমিং পুল ১০ লক্ষ টাকার হতে পারে, আবার দশ কোটি টাকারও হতে পারে। যেমন প্রয়োজন, তেমন খরচ হবে। সুইমিং পুলের জন্য তো পরিষেবার কোনও কাজ আটকাচ্ছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement