পিছনে ধোঁয়া উপেক্ষা করেই চলছে রোজকার মতো কেনাবেচা। রবিবার, বড়বাজার এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
দুটোই যুদ্ধ। একটা আগুনের হাত থেকে শেষ সম্বল বাঁচানোর লড়াই। আর একটা, রুটি-রুজির কঠিন শর্ত মেনে বেঁচে থাকার। বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে এই দু’ধরনের লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল রবিবারের রবীন্দ্র সরণি।
সপ্তাহের অন্য দিন ক্যানিং স্ট্রিটে বাগড়ি মার্কেটের ‘ই’ ব্লকের সামনে ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেন বেলুন বিক্রেতা মহম্মদ আফতাব, সিদ্দিকি সাহেব, সাদ্দাম হুসেনরা। কারখানা থেকে বেলুনের প্যাকেট কিনে পাইকারি দরে বিক্রি করেন তাঁরা। প্রতিদিনের মতো এ দিন সকালে ক্যানিং স্ট্রিটে পৌঁছে দেখেন, তাঁদের ব্যবসার জায়গার দখল নিয়েছে দমকলের ইঞ্জিন। বাগড়ি মার্কেটের দোতলা-তিন তলা থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। চারপাশে সর্বস্বান্ত হওয়া ব্যবসায়ীদের দৌড়াদৌড়ি। আফতাবের কথায়, ‘‘কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে সে সব দেখার পরে ভাবলাম, আমার বেলুনগুলোর কী হবে? মাল যখন বানিয়েছি, বিক্রি তো করতে হবে। না হলে তো অনেক ক্ষতি।’’
বাগড়ির ব্যবসায়ীদের জন্য সমবেদনা আছে আফতাব, সিদ্দিকি, সাদ্দামদের। কিন্তু ব্যবসা না হলে তাঁদেরও অবস্থা একই দাঁড়াবে বলে দাবি ওঁদের। এই ভাবনা থেকেই ক্যানিং স্ট্রিটের উল্টো দিকে মৌলানা শওকত আলি স্ট্রিটের ফুটপাতে ডালা সাজিয়ে খদ্দের ডাকা শুরু করে দেন সিদ্দিকিরা। পিছনে আগুনের ধোঁয়াকে উপেক্ষা করে নিখুঁত ব্যবসায়িক কৌশলে সিদ্দিকির ডাক, ‘‘আজ সব মাল সস্তা!’’
মৌলানা শওকত আলি স্ট্রিটে মূলত বিস্কুটের দোকানের আধিক্য বেশি। তেমনই এক বিস্কুটের দোকানের ব্যবসায়ী মহম্মদ ইরফান বলেন, ‘‘১৫০ টাকা কেজির বিস্কুট ১২০ টাকায় বিক্রি করেছি। কারখানা থেকে বরাতের বিস্কুট বিক্রি না করলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। রাত থেকে আগুন নেভানোর কাজে লেগেছিলাম। সকাল হওয়ার পরে ব্যবসার কাজে লেগে পড়েছি।’’ আর এক ব্যবসায়ী সিরাজ আলম বলেন, ‘‘এই ফুটপাতই আমাদের ঘর, দোকান সব কিছু। ফুটপাতের একটাই শর্ত। যা-ই ঘটুক, কাজ আপনাকে করতেই হবে।’’