শনিবার রাতে ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।
বায়ো টয়লেট নিয়ে যে জটিলটা তৈরি হতে পারে, আন্দাজই করতে পারেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার সকালে অনশনমঞ্চ থেকে চিকিৎসক অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বায়ো টয়লেট নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে, আমরা ভাবতে পারিনি। আমরা বায়ো টয়লেট এনেছিলাম। পুলিশ জানায়, এটা গ্রিন জ়োন। তাই এখানে বায়ো টয়লেট রাখা যাবে না। বায়ো টয়লেটের অনুমতি চেয়ে আমরা শনিবার সন্ধ্যায় লালবাজারে ইমেল করেছিলাম। এখনও জবাব পাইনি। আপাতত আমাদের কিছুটা দূরে গিয়ে একটি টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দাবি খুব স্পষ্ট। ১০ দফা দাবির প্রতিটিই আন্দোলনের শুরু থেকে ছিল। আরজি করের মতো আর একটা ঘটনা যেন না ঘটে, সে কথা মাথায় রেখেই আমাদের দাবি।’’
ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসেছেন। তবে ধর্মতলায় তাঁদের অবস্থানমঞ্চে অন্যান্য় আন্দোলনকারীরাও আছেন। জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি তুলে নিয়েছেন। কাজে যোগ দিয়েছেন শনিবার থেকেই। ছয় অনশনকারীর সহকর্মীরা সময় মতো ধর্মতলায় এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে যাচ্ছেন।
ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের ১২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে অনশন শুরু করেছেন তাঁরা। মঞ্চেই একধারে বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে কাউন্টডাউন চলছে। প্রতি ঘণ্টায় সময়ের হিসাব লিখে দেওয়া হচ্ছে সেই বোর্ডে।
বায়ো টয়লেটের জন্য পুলিশকে ইমেল করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বলা হয়েছে, আমরণ অনশনের জন্য ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চে বায়ো টয়লেট প্রয়োজন। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য দু’টি আলাদা বায়ো টয়লেটের অনুমতি চাওয়া হয়েছে পুলিশের কাছে। জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে ইমেল করা হয়েছে।
অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের মঞ্চে ‘বায়ো টয়লেট’ নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। আন্দোলনকারী চিকিৎসক পুলস্ত্য বলেন, ‘‘বায়ো টয়লেটের জন্য আমরা পুলিশকে ইমেলও করেছিলাম। আমাদের সে সব আনতে দেওয়া হচ্ছে না। বলা হয়েছে, ওদের বড়বাবু আসার আগে বায়ো টয়লেট নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তিনি ১১টার পর আসবেন। চিকিৎসার সময় কি আমরা বলি, বড়রা কেউ না এলে আমরা পরিষেবা দেব না? এটা অমানবিক, নিন্দনীয়, ঘৃণ্য।’’
শনিবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক থেকে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল সরকারকে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর পেলাম শুধুই হুমকি। আমাদের উৎসবে ফিরতে বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা সেই মানসিক অবস্থায় নেই। এখন থেকেই আমরণ অনশনে বসছি আমরা। কাজে ফিরছি কিন্তু খাবার খাব না।’’
ধর্মতলার অনশনমঞ্চে সিসিটিভি বসিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং নিরাপত্তার কারণে ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তালিকায় রয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, তনয়া পাঁজা এবং ক্যানসার বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট স্নিগ্ধা হাজরা। এ ছাড়াও, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, এনআরএসের পুলস্ত্য আচার্য এবং কেপিসি হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা অনশনে বসেছেন।
ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ এবং অনশন কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা কলকাতা পুলিশকে ইমেল করেছিলেন। কিন্তু শনিবার লালবাজার থেকে তাঁদের পাল্টা ইমেল করে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনুমতি দেওয়া যাবে না। পুজোর আগে ধর্মতলা চত্বরে কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় বেশি থাকে। বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে যাওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে অবস্থানে বসলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হবে বলে জানায় পুলিশ।
প্রতি ঘণ্টার হিসাব রাখা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি ঘণ্টার হিসাব রাখা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলা চত্বরে মধ্যরাতেও আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবার ঘড়ির কাঁটা মেপে ঠিক রাত সাড়ে ৮টায় অনশনের কথা ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। যে ছ’জন অনশনে বসছেন, তাঁদের মধ্যে তিন জনই মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। বাকিদের মধ্যে কেউ এসএসকেএম, কেউ আবার কেপিসি, আবার কেউ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-পড়ুয়া।
(বাঁ দিক থেকে) অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, তনয়া পাঁজা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং পুলস্ত্য আচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবারই ‘আমরণ অনশনে’র হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার এসএসকেএম থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে এসে অবস্থানে বসেন তাঁরা। ঘোষণা করেন, কর্মবিরতি তুলে নিলেও যত দিন পর্যন্ত না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে, তত দিন অবস্থান চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে এ-ও জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার দাবি না মানলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন।
অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।