পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি ও প্রতীকী শিরদাঁড়া দিয়ে আসল জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদল। ছবি: আন্দোলনকারীদের সৌজন্যে।
লালবাজারে গিয়ে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে কথা বলার পর রাস্তার অবস্থান তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন জারি রাখবেন তাঁরা। এই সিদ্ধান্তের পর বিকালে রাস্তা পরিষ্কার করে দিলেন আন্দোলনকারীরা।
রাস্তা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল বলে, “পুলিশ কমিশনারকে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি এই ঘটনায় নৈতিক দায়ভার নিচ্ছেন কি না। জবাবে সিপি জানিয়েছেন, তিনি নিজের কাজে সন্তুষ্ট। তবে যদি তাঁর কোনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনে করেন, তিনি নিজের কাজে ব্যর্থ এবং তাঁকে যদি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়— সেটিও তিনি হাসিমুখে মেনে নেবেন।” আন্দোলনকারীরা আরও জানান, যে প্রতীকী শিরদাঁড়াটি তাঁরা লালবাজারে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটিও দিয়ে এসেছেন।
পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর সন্তুষ্ট নয় আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদল। লালবাজার থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা বলেন, “১৪ তারিখ ও ১২ তারিখের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁরা স্বীকার করেছেন, এটি পুলিশি ব্যর্থতা। কিন্তু আলোচনার কোনও সদুত্তর আমরা পুলিশ কমিশনারের থেকে পাইনি। আমরা আমাদের দাবিতে এখনও অনড়। নৈতিক দায় নিয়ে সিপির পদত্যাগ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।” প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নিলেও বিচারের দাবিতে আন্দোলন একই ভাবে চলবে।
লালবাজার থেকে বার হওয়ার পর সহ-আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বার্তা প্রতিনিধি দলের। —নিজস্ব চিত্র।
লালবাজার থেকে বার হলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর লালবাজার থেকে বার হলেন তাঁরা।
এক ঘণ্টা অতিক্রান্ত লালবাজারের ভিতরে প্রবেশ করেছেন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। পুলিশ কমিশনারের ইস্তফার দাবি তুলেছেন তাঁরা। সেই দাবি নিয়েই বিনীতের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করতে ইতিমধ্যেই লালবাজারে পৌঁছেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ২২ জনের প্রতিনিধি দল। সোমবার থেকে যে প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন তাঁরা, সেটিকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন লালবাজারে। প্রশ্ন করায় উত্তর, সেটি পুলিশ কমিশনারকে ‘উপহার’ দেবেন তাঁরা। সূত্রের খবর, চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দলের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে তাঁরা হেঁটেই লালবাজারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে লালবাজারের পথে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র।
মানববন্ধন করে লালবাজারের দিকে একশো মিটার পথ এগোলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। গানের সুরে, স্লোগানে স্লোগানে একশো মিটার পথ এগিয়ে ব্যাপটিস্ট গির্জার সামনে আপাতত অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকেরা। মিছিলের একেবারে সামনের সারিতে মানববন্ধন করে রেখেছেন চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা। কোনও লোহার ব্যারিকেড আর রাখা হয়নি পুলিশের তরফে। এর পর এখান থেকে লালবাজারে আন্দোলনকারীদের ২২ জনের প্রতিনিধি দল। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তাঁরা।
একশো মিটার পথ এগিয়ে অপেক্ষায় চিকিৎসকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে, নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে স্লোগান তুলতে তুলতে মিছিল এগোচ্ছে লালবাজারের দিকে। ধ্বনি উঠছে মিছিল থেকে, “তোমার আমার এক স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর।”
আরও একশো মিটার পথ হাঁটলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যারিকেড সরতেই লালবাজারের দিকে আরও কিছুটা এগোতে শুরু করেছে মিছিল। সামনের সারিতে হাতে হাত ধরে মানববন্ধন করে রেখেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তার পিছনে ‘আমরা করব জয়’ গাইতে গাইতে এগোচ্ছেন আন্দোলনরত ডাক্তারেরা।
ব্যারিকেড সরানোর প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। মিছিল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। পুলিশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো মিছিলের একেবারে সামনেই মানববন্ধন করা হয়েছে। ওই মানববন্ধনের পিছনেই একশো মিটার পর্যন্ত এগোবে মিছিল।
ব্যারিকেড সরানো হল ফিয়ার্স লেনের রাস্তা থেকে। এই ব্যারিকেড থেকে আরও ১০০ মিটার পথ মিছিল করবেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। এর পরও লালবাজার পর্যন্ত যেতে বাকি থাকবে প্রায় ৪০০ মিটার পথ। ওই পথটুকু যাবেন আন্দোলনকারীদের ২২ জনের প্রতিনিধি দল। বাকিরা ৪০০ মিটার দূরেই অবস্থান করবেন। তবে কোনও ব্যারিকেড নয়, মানববন্ধন করেই ভিড় সামলাবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ভিড়ের উপর নজর রাখবেন পুলিশকর্মীরাও।
ব্যারিকেডের সামনে অপেক্ষায় আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যারিকেডের সামনে প্রতীকী মেরুদণ্ড হাতে অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকেরা। প্রায় ২২ ঘণ্টা অবস্থানের পর এখান থেকেই লালবাজারের দিকে আরও একশো মিটার এগোবেন তাঁরা।
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি ছিল বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থল পর্যন্ত তাঁদের এগোতে দেওয়া হোক। তবে তত দূর এগোতে পারছেন না তাঁরা। মিছিল যেখানে আটকে ছিল, সেখান থেকে ব্যারিকেডের অপর প্রান্তে আরও একশো মিটার এগোতে পারবেন তাঁরা। ব্যারিকেডের অপর প্রান্তে যাওয়ার অনুমতি মিলতেই মনোবল আরও বেড়েছে আন্দোলনকারীদের। ‘আমরা করব জয়...’, ব্যারিকেডের সামনে সমস্বরে গান গাইছেন আন্দোলনকারীরা।
চলছে দেড় মানুষ সমান উঁচু লোহার ব্যারিকেড সরানোর প্রক্রিয়া। —নিজস্ব চিত্র।
ফিয়ার্স লেনের ব্যারিকেড সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ। মিছিল আরও একশো মিটার এগোনোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ২২ জনের প্রতিনিধি দল লালবাজারে প্রবেশ করবে। তাঁরা সেখানে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন।
ফিয়ার্স লেনে ব্যারিকেড সরানোর প্রক্রিয়া শুরু। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার থেকে দফায় দফায় চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা। সোমবার রাতে দু’বার। তার পরে মঙ্গলবার সকালে অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। এর পর দুপুরে জয়েন্ট সিপি রূপেশ কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। আন্দোলনকারীদের দাবি, কোনও ব্যারিকেড রাখা যাবে না। তাঁরা মানববন্ধন করে ভিড় সামলাবেন।
দুপুর দুটো নাগাদ ফিয়ার্স লেনের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে ফের এক দফা কথা বলল পুলিশ। এ বার কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি রূপেশ কুমার কথা বলতে আসেন কিঞ্জল নন্দ-সহ চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে। ব্যারিকেড সরিয়ে দিলে কত দূর এগোবেন চিকিৎসকেরা, তার পর কী করবেন, সে বিষয়ে জানতে চান জয়েন্ট সিপি।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন জয়েন্ট সিপি রূপেশ কুমার। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার রাতে এক বার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছিল পুলিশ। কিন্তু সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ফের একবার অবস্থানরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার সন্তোষ পাণ্ডে। চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ-সহ বাকি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অনুরোধ করেন রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য, একটি প্রতিনিধি দল যাতে সেখান থেকেই স্মারকলিপি লালবাজারে জমা দিয়ে আসে, সে কথাও বলেন অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার।
কিন্তু চিকিৎসকরা নিজেদের দাবিতে অনড়। লালবাজারের উদ্দেশ্যে তাঁরা তিনটি বিকল্প দিয়েছেন। প্রথম বিকল্প, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল নিজে এসে অবস্থানরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে তাঁকে স্মারকলিপি পড়ে শোনানো হবে এবং তিনি সেটি গ্রহণ করবেন। দ্বিতীয় বিকল্প, চিকিৎসকদের মিছিলকে লালবাজারের দিকে আরও এগতে দিতে হবে। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থল পর্যন্ত। এর পর সেখান থেকে চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল লালবাজারে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেবেন। যদি এই দুই বিকল্পের মধ্যে কোনওটিই না হয় তবে তৃতীয় বিকল্প, পদত্যাগ করতে হবে পুলিশ কমিশনার বিনীতকে।
লালবাজার থেকে আধ কিলোমিটার দূরে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সকালে রোদ উঠতেই ছাতা খুলে বসেছেন তাঁরা। টাঙানো হয়েছে ত্রিপল। দাবি পূরণের লক্ষ্যে অবস্থান যে দীর্ঘায়িত হতে চলেছে, সেই আভাস মিলেছে। আন্দোলনকারীরা বলে দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা পিছু হটবেন না। এ সবের মধ্যে কুণাল ঘোষও সমাজমাধ্যমে এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “রাত থাকলে ভোরও আসে।”
মঙ্গলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। ছবি: সারমিন বেগম।
রাত জেগেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সোমবার রাতে লালবাজারে ছিলেন না পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে দেখা না করেই পুলিশ কমিশনার লালবাজার ছেড়েছিলেন সোমবার রাতে। এর পর মঙ্গলবার বেলা ১০টার কিছু সময় পর লালবাজারে প্রবেশ করলেন বিনীত। লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর থেকে আধ কিলোমিটার দূরেই ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের।
সোমবার রাত জাগার পর ভোরের দিকে কাউকে কাউকে রাস্তার উপরেই শুয়ে একটু বিশ্রাম করে নিতে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ আবার কয়েক জন মিলে গোল করে বসেছিলেন বিক্ষিপ্ত ভাবে। দ্বিতীয় দিন বেলা গড়াতেই আবার এক জায়গায় জড়ো হতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। সময় যত বাড়ছে, তত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের ভিড়।