কালনার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
কালনায় রাজনৈতিক জনসভায় যোগ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য় গোয়াল ভাল। দুর্নীতি ঢাকতে এ দিক ও দিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। গিয়েছে ভাল হয়েছে। আপদ বিপদ হয়েছে।’’
সম্প্রতি কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। ২০১৪ সালের টেট-এ তাঁর পরিবারের বেশ কয়েক জনের চাকরি হওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর টেট-এ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। সেই কালনাতেই দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ কেউ দেখবেন, ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে অন্য দলে যোগ দিচ্ছে। কারণ জানে, আমি টিকিট দেব না।’’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘কেন দেব? সারা বছর মানুষের পাশে থাকবে না। শুধু নিজের আর পরিবারের কথা ভাববে, তাঁকে কেন টিকিট দেব?’’
এই প্রসঙ্গেই মমতা আরও বলেন, ‘‘আমি অন্যায় সহ্য করি না। তৃণমূলের কেউ অন্যায় করলে আমাকে বলবেন, আমি কান মলে দেব। নয়তো গালে দু’টো থাপ্পড় মারব। কিন্তু অন্যায় আমি কিছুতেই মেনে নেব না।’’
বিজেপি-কে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ, ‘‘ভোটের সময় অনেকেই এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেবে। টাকা দেবে। দিলে টাকা নিয়ে নেবেন। কিন্তু ভোটটা দেবেন তৃণমূলে। কারণ ওই টাকা ওদের নয়। আপনার-আমার মতো সাধারণ মানুষের টাকা।’’ ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে কালো টাকা উদ্ধার করে আম জনতার অ্যাকাউন্টে সেই টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা দেবে, দিয়েছে? পেয়েছেন? এ বারও আসবে। অনেক প্রতিশ্রুতি দেবে। কিন্তু সে সবে কান দেবেন না।’’
মমতার বক্তব্য:
১২.৪৫: বিজেপি একটা কুৎসাকারী দল। কখনও নোটবন্দি, কখনও কোভিড, কখনও ঘরবন্দি, কখনও জেলবন্দি করে। একটা টাকা ভাড়া দিল না পরিযায়ী শ্রমিকদের? আমরা সমস্ত শ্রমিকের ট্রেনের ভাড়া দিয়েছি। বলেছিল, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেব। দিয়েছে? এ বারও এসে বলবে, এই দেব, ওই দেব। বাংলার শাসন বাংলার মানুষই করবে। গুজরাত থেকে এসে কেউ করবে না। অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু সেই সব কথায় কান দেবেন না। আর যদি ভয় দেখায়? রান্না করেন তো? হাতা-খুন্তি দিয়ে রান্নাও করা যায়, মাতায় হাত বুলিয়েও দেওয়া যায়। কী বলছি বুঝতে পারছেন তো?
১২.৪০: আমি অন্যায় সহ্য করি না। তৃণমূলের কেউ অন্যায় করলে আমাকে বলবেন, আমি কান মলে দেব। নয়তো গালে দু’টো থাপ্পড় মারব। কেউ কেউ দেখছেন পালিয়ে যাচ্ছে। কারণ জানে টিকিট পাবে না। টিকিট দেব না। কেন দেব? সারা বছর মানুষের পাশে থাকবে না। শুধু নিজের কথা, পরিবারের কথা ভাববে, আর ভোটের সময় টিকিট চাইবে, তা হবে না।
১২.৩৯: সব বহিরাগত। একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। গাড়ি তো নয়, ওর মধ্যে হোটেল। এর পর একটা বাড়িতে গিয়ে খাবে। ফাইভ স্টার হোটেল থেকে খাবার এনে খাচ্ছে, আর বলছে, ছবি তুলুন। আপনারা পুকুরের জল খাবেন, টিউবওয়েলের জল খাবেন, আর ওরা হিমালয়ান ওয়াটার খাবে। যা ছিল বাম, তাই হয়েছে রাম।
১২.৩৬: কৃষকদের আটকাতে দিল্লিতে, হরিয়ানায় কী করছে দেখুন। রাস্তায় পেরেক পুঁতে রেখেছে, যাতে কৃষকরা এগোতে না পারে। বিজেপি মানেই সর্বনাশ। ঘরে ঘরে ঝগড়া বাধিয়ে দিচ্ছে, বন্ধুকে বন্ধুর সঙ্গে লড়িয়ে দিচ্ছে। হিন্দু ধর্ম নিয়ে বড় বড় কথা বলছে। কেন, আমরা হিন্দু নই? আমরা কি হিন্দু নই? আমরা কি বলি, মুসলিমদের আমরা ঘৃনা করি?
১২.৩৪: বিজেপি একটা পার্টি। ইলেকশনের সময় আসছে। টাকা নিয়ে আসছে। টাকা দিলে ওটা ওদের টাকা নয়, সাধারণ মানুষের টাকা। টাকা দিলে টাকা নেবেন। খেয়ে নেবেন। আর ভোট বাক্সে গিয়ে উল্টে দেবেন। ত্রিপুরায় গিয়ে দেখে আসুন। ওখানে বাঙালিরা ভোট দেওয়ার পর কাঁদছে। অসমে দেখুন, এনআরসি-র নামে কী ভাবে অত্যাচার হচ্ছে। এমনকি, সাংবাদিকরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। রাজদীপ সরদেশাই-এর মতো সিনিয়র সাংবাদিককে পর্যন্ত কথা বলতে দিচ্ছে না। একটা টুইট করেছিলেন। তার জন্য় তাঁকে সেন্সর করা হয়েছে।
১২.৩২: তফশিলি, আদিবাসীরা ৬০ বছর বয়স হলেই ভাতা পাবেন। সংখ্যালঘুদের ওবিসি-তে অন্তর্ভুক্ত করায় তাঁরাও এই সব সুবিধা পাচ্ছেন। রাজবংশী ভাষার জন্য আলাদা স্কুল হচ্ছে। আদিবাসীদের জন্য স্কুল হবে।
১২.৩০: আমরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিচ্ছি। আমরা ১৫ লক্ষ বিধবা মানুষ দুয়ারে সরকারে এসেছিলেন। আমরা সবাইকে বিধবা ভাতা করে দিয়েছি। আগে কৃষকদের ভাতা ৭৫০ টাকা ছিল। এখন সেটা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছর বয়সের পর থেকে কেউ বিধবা হলে, তাঁকেও আমরা বিধবা ভাতা দেব। পুরোহিতদের ১ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। লোকশিল্পীদেরও ভাতা দিই আমরা।
১২.২৬: কৃষকদের জন্য় আমরা অনেক কিছু করেছি। কৃষকদের শস্যবিমার প্রিমিয়াম এক টাকাও কৃষককে দিতে হয় না। আমরা সব টাকাই দিই। আমরা কৃষকদের থেকে চাল কিনি। বিজেপি ভোটের সময় এসে বলবে ভোট দাও। কেন দেবে? উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশে সব ধান কিনে নেয়। আর এ রাজ্যে সামান্য ধান কেনে। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে সব ধান কিনে নিই। বিনা পয়সায় রেশনে চাল দিই। চাষিদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। তৃণমূল থাকছে। কৃষকদের কাছ থেকে চাল কিনবে। রেশনে বিনা পয়সায় চাল দেব।
১২.২৫: আজ পর্যন্ত মানুষ জানতে পারল না নেতাজির মৃত্যু দিবস কবে? বিজেপিকে দেখে নিতেই হবে। বিজেপি কোনও দিন দুর্গাপুজো করেছে। আমার বাড়িতে বহু বছর আগে থেকে কালীপুজো হয়।
১২.২৩: কয়েকটা দুষ্টু গরু হাম্বা হাম্বা করতে করতে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। গিয়েছে ভাল হয়েছে। আপদ বিপদ হয়েছে। কারণ, দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।
১২.১৫: কালনা ঐতিহাসিক শহর। এখানে রয়েছে প্রচুর মন্দির। এই শহর সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দেয় এই শহর।