রায়গঞ্জের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রায়গঞ্জের জনসভা থেকে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ তথা রথযাত্রা করছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এটা রথযাত্রা নয়, ভিতরে বিলাসবহুল বন্দোবস্ত রয়েছে। বেআইনি হোটেল। এই বিজেপি নেতারা কি জগন্নাথ দেবের থেকেও বড়?’’
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা লোভী, তাঁদের বাদ দিন। যাঁরা ভোগী, তাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন।’’ বহিরাগত ইস্যুতেও আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘এরা সব বহিরাগত। দিল্লি থেকে এসে বাংলা শাসন করবে, এটা আমি কোনও ভাবেই হতে দেব না। আমি রুখবই। আমি আন্দোলন করতে করতে এই জায়গায় এসেছি। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’’
মমতার বক্তব্য:
১.৪০: সংখ্যালঘু ভাই-বোনেরা জানবেন, তৃণমূল ছাড়া আর কেউ আপনাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। হায়দরাবাদের এক নেতা না হোতা, কাকে নিয়ে এসে মাঠে নামিয়েছে। এবারের ভোট আমার ভোট। প্রার্থী কে দেখার দরকার নেই। আমাকে ভোট দেবেন।
১.৩৮: আমপান এসেছিল, চলে গিয়েছে। মানুষ জিতেছে। কোভিড এসেছিল, সেও চলে গিয়েছে। আর খাদ্যসাথীতে বিনা মূল্যে খাবার আপনারা পাবেন। প্যারাটিচারদের যে তিন বছরে ৩ শতাংশ বাড়ত, সেটা এখন প্রতি বছর ৩ শতাংশ করে দিয়েছি। সবুজ সাথীতে আমরা এক কোটি সাইকেল দিয়েছি। আরও ২০ লক্ষ সাইকেল তৈরি আছে। ট্যাব দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পাননি, তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১.৩৬: সারা দেশে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে। আর আমরা বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। ১০০ দিনের কাজে আমরা ১ নম্বর। আর এই রথ নিয়ে এসেছেন রথবাবুরা। রথ তো নয়, হোটেল। এগুলো তো বেআইনি হোটেল। আমরা আমাদের দেবতাদের সম্মান করি, আপনাদের মতো অসম্মান করি না।
১.৩২: একটা আসল নেতাজি আর একটা সিনেমার নেতাজি এক হল? আর বলে বেড়াচ্ছে বহিরাগত গুন্ডারা এসে বাংলা শাসন করবে। আমরা বলি, বাংলাকে শাসন করবে বাংলাই। ভোটের সময় দেখবেন, গুন্ডাদের এনে ভয় দেখাবে। কোথাও কোথাও কেন্দ্রের পুলিশ দিয়ে ভয় দেখাবে। কিন্তু ভয় পাবেন না। আর দেখবেন টাকা নিয়ে আসবে। কিছু সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যানের হাতেও টাকা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা নিচ্ছেন না। আমি বলি টাকা দিলে টাকা নিয়ে নিন। কিন্তু ভোটের সময় ভোট দেবেন না। কারণ ওটা আপনার টাকা।
১.৩০: আজকে ভাবুন, রাজবংশীরা নিজের ভাষায় পড়াশোনা করবেন। আমি তাদের জন্য ২০০ স্কুল করে দিচ্ছি। গোর্খা ভাষায় কথা বলেন পাহাড়ি ভাই-বোনেরা। তাঁদের জন্যও স্কুল করে দিচ্ছি। আজ যাঁরা কন্যাশ্রী, আগামী দিনে তাঁরা বিশ্বশ্রী হবে। আর বিজেপির মতো একটা পার্টি, একটা ভাল কথা বলতে পারে না। বীরসা মুণ্ডার নামে কার এক জনের গলায় মালা দিয়ে এল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ারে বসে পড়ছে, আর বলছে রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিল শান্তিনিকেতনে। স্বামী বিবেকানন্দকে বলছে ‘বিবেকানন্দ ঠাকুর’। বিবেকানন্দের নাম আর রবীন্দ্রনাথের পদবী এক করে দিয়েছে।
১.২৭: বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছে তৃণমূল সরকার, স্বাস্থ্যসাথী বিনা পয়সায় দিচ্ছে সরকার। আর তুমি দাঙ্গা করে বেড়াচ্ছ? অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছ? দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুরে কত হাসপাতাল হয়েছে। আগে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক একটা পরিবার দেউলিয়া হয়ে যেত। রায়গঞ্জে মেডিক্যাল কলেজের সব ব্যবস্থা আপনারা পাবেন। আশা রাখতে হবে। রায়গঞ্জকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস করেছি। বালুরঘাটে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।
১.২৪: বিজেপি রোজ বলে বেড়াচ্ছে, মহিলারা নাকি ঘর থেকে বেরোতে পারে না। জিজ্ঞেস করুন ওদের, উত্তরপ্রদেশে কী হচ্ছে। কী ভাবে দলিতদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের বাংলা সোনার বাংলা, এ মাটি সোনার মাটি। এই মাটিতে কোনও রকম গন্ডগোল, কোনও রকম অশান্তি আমরা করতে গবে না।
১.২০: আমি দুঃখিত, এরা রথের অপমান করছে। এরা মানুষের চোখে ন্যাবা করে দিচ্ছে। আমরা যা বলছি, সেটাই বিশ্বাস কর। কেন করবেন? ঘরে বসে ভিডিয়ো তৈরি করছে, যেমন সিনেমা তৈরি করে, যেমন নাটক তৈরি করে। সেই রকম ভিডিয়ো তৈরি করে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর বলছে, দেখুন বাংলায় কী রকম অত্যাচার হচ্ছে।
১.১৮: আপনারা জানেন হেমতাবাদে আমার সভায় ২ জন উঠে পড়েছিল। এখানে এটা প্রবণতা আছে। বিজেপি নেতারা কি জগন্নাথ দেবের থেকেও বড়? তাঁদের কি পুজো করতে হবে? আমরা দেখেছি, যুদ্ধের সময়ও রথের ব্যবহার হয়। অর্জুনের রথের সারথি ছিলেন কৃষ্ণ। এরা কি কৃষ্ণ? এই কৃষ্ণরা কোথা থেকে এল?