Buddhadeb Bhattacharjee Death

১১ বছরের সঙ্গীর দেখানো পথেই এনআরএসে প্রবেশ

শববাহী শকট থেকে নামিয়ে যে ট্রলিতে করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে, সেটি এবং ওই ঘরের ভিতরে মাঝখানে দেহরাখার শয্যাও প্রস্তুত ছিল।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৬:২৭
Share:

হসপিটাল এর এ্যানাটমী বিভাগে সংরক্ষণের জন্য রাখা হলো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ। ছবি সুমন বল্লভ।

২০০৬ সালের ৮ মার্চ, বুধবার। মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন ৬২ বছরের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকারপত্রে সাক্ষী হিসাবে সই করেছিলেন নিরুপম সেন ও মদন ঘোষ। ১৮ বছর পরে, ৯ অগস্ট, শুক্রবার বিকেলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সেই ইচ্ছে পূরণ করলেন তাঁর পরিজনেরা। রাজনৈতিক সতীর্থ অনিল বিশ্বাস, বিনয় চৌধুরী, প্রশান্ত শূরের পথেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দান করা হল বুদ্ধদেবের দেহ।

Advertisement

এন আর এসের অ্যানাটমি বিভাগের একতলার শ্রেণিকক্ষের ভিতরে এ দিন সকাল থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল সব রকমের ব্যবস্থা। শববাহী শকট থেকে নামিয়ে যে ট্রলিতে করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে, সেটি এবং ওই ঘরের ভিতরে মাঝখানে দেহরাখার শয্যাও প্রস্তুত ছিল। সাদা চাদরে মুড়ে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল সেই শয্যা। এ দিন বামফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও পৌঁছে যান অ্যানাটমি বিভাগে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হাসপাতালে এসে পৌঁছয় বুদ্ধদেবের দেহ। জানা যাচ্ছে, তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতনের থেকে দেহটি গ্রহণ করেন এন আর এসের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী ও অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুদেষ্ণা মজুমদার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, এন আর এসের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তনু সেন, কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, ‘অ্যানাটমিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র রাজ্য শাখার সভাপতি ও শিক্ষক-চিকিৎসক অভিজিৎ ভক্ত। একে একে সকলেই শ্রদ্ধা জানান বুদ্ধদেবকে।

অভিজিৎ জানান, দেহ গ্রহণের পরে তাতে ‘এমবামিং’ করা হয়েছে। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে দেহের মোটা কোনও শিরা দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত রাসায়নিক (এমবামিং ফ্লুইড) প্রবেশ করানো হয়েছে। যাতে টিসুগুলি নষ্ট না হয়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে সেই প্রক্রিয়া। সেটি সম্পন্ন হওয়ার পরে নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে সংরক্ষিত করা হয়েছে বুদ্ধদেবের দেহ।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রতিদিন ঠিক সকাল ন’টায় পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলিমুদ্দিনের দলীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দিতেন বুদ্ধদেব। ‘স্যর’কে দেখে কখনও-সখনও নিজেদের হাতঘড়ির সময় মিলিয়ে নিতেন পাইলট কার এবং তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারেরা। কারণ, কোনও দিনও ন’টা বেজে এক মিনিট হতে দেখেননি তাঁরা। দীর্ঘ বছরের এই কর্মসূচিতে তাঁর কনভয়ের একেবারে সামনে লাল রঙের ‘বুলেট’ নিয়ে ফার্স্ট পাইলটের দায়িত্বে থাকতেন এক অফিসার। সেই অফিসারের তত্ত্বাবধানেই শুক্রবার বিকেলে আলিমুদ্দিন থেকে মৌলালি মোড় পর্যন্ত এলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

১৯৯৯ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। তখন মাঝেমধ্যে ফার্স্ট পাইলটের দায়িত্ব পড়ত সার্জেন্ট সুমন মুখোপাধ্যায়ের। তবে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের কনভয়ে নির্দিষ্ট ভাবে ফার্স্ট পাইলটেরদায়িত্ব সামলাতে শুরু করেন ওই অফিসার। বর্তমানে তিনি কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের সহকারী নগরপাল। তাঁর কথায়, ‘‘২০১১ সালের ১৩ মে, অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী থাকার শেষ দিন পর্যন্ত ওঁর সঙ্গে ছিলাম। প্রায় এগারো বছরের ওই সময়ের শেষের মাস ছয়েক ইনস্পেক্টর হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে এসকর্টের দায়িত্বে ছিলাম। তখন জেলা সফরে গেলে সকলে ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করছেন কিনা, সেই খোঁজও নিতেন। ওঁর থেকে শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শিক্ষণীয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement