—প্রতীকী ছবি।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে শহরে অবৈধ নির্মাণ রুখতে কঠোর হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তারই অঙ্গ হিসাবে এ বার পুর প্রশাসনের নজরদারির আওতায় আসতে চলেছেন লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়র (এলবিএস)-রাও। সম্প্রতি পুর কমিশনার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, শহরের কোথাও বাড়ি বা বহুতলের নকশা করে দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়রের। সেই নকশা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ অনুমোদন করার পরে আগামী পাঁচ বছর ওই নির্মাণকাজে নিরন্তর নজরদারি চালাতে হবে এলবিএস-দের। শুধু তা-ই নয়, প্রতি ১৫ দিন অন্তর সংশ্লিষ্ট এলবিএস, পুরসভার নথিভুক্ত (এমপ্যানেলড) স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থপতিরা বরোর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল)-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে।
পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল, বাড়ি তৈরির সময়ে অধিকাংশ মালিকই এলবিএস-দের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করতেন না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নির্মাণের নকশা অনুমোদিত হয়ে হাতে আসার পরে মালিকেরা সংশ্লিষ্ট এলবিএস-কে জানিয়ে দিতেন, তাঁদের পরামর্শ নেওয়ার আর প্রয়োজন নেই। পুর বিল্ডিং বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, এই সুযোগে অনেক বাড়ির মালিকই বেআইনি নির্মাণ তুলতেন। কিন্তু পুর কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে অনেক এলবিএস-ই বাড়ির মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তির তাগিদ অনুভব করছেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কমিশনার স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও নির্মাণের প্রাথমিক নকশা অনুমোদনের পরে এলবিএস সেখান থেকে সরে এলে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে নতুন এলবিএস-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। যত দিন না সেটি হচ্ছে, তত দিন মালিক ওই বাড়ির নির্মাণকাজ শুরুই করতে পারবেন না। এর অন্যথা হলে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ ওই বাড়ির নকশা বাতিল করে দেবে। পুর বিল্ডিং বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘নকশা অনুমোদনের পরপরই কোনও এলবিএস-এর সঙ্গে মৌখিক চুক্তি ভাঙার সুযোগ নিয়ে অনেক বাড়ির মালিক বেআইনি নির্মাণের পথে যাচ্ছিলেন। এই প্রবণতা ভাঙতে পুর কমিশনারের নতুন বিজ্ঞপ্তি বার্তাবহ তো বটেই।’’ পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক জানান, কমিশনারের এই বিজ্ঞপ্তি অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট এলবিএস, নথিভুক্ত স্ট্রাকাচারাল ইঞ্জিনিয়ার বা স্থপতিদের শো-কজ় করে তাঁদের লাইসেন্স বাতিলও করা হতে পারে।
এ দিকে, এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুরসভার নথিভুক্ত এলবিএস মহলে। এমন এলবিএস রয়েছেন প্রায় তিন হাজার। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা এই বিজ্ঞপ্তির তীব্র প্রতিবাদ করছি। কোনও বাড়ির নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে সেটির নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগে অন্তত পাঁচ বছর। সেই সময়ে টানা নজরদারি চালানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এই দায়িত্ব পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে বর্তায়।’’