আঁধারেই বালি ব্রিজ, সমস্যা মেটার আশ্বাস

রাত ৮টা। বালি ব্রিজ দিয়ে দক্ষিণেশ্বরের দিকে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। অন্ধকার রাস্তায় ভরসা বলতে একমাত্র মোটরবাইকের হেডলাইট। কিন্তু সেই আলো যতদূর পৌঁছচ্ছে, তার পরে কি রয়েছে তা ঠাহর করতে পারছিলেন না ওই মোটরবাইক চালক। ফলে ঘটল বিপত্তি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০০:০৫
Share:

এ ভাবেই যাতায়াত। বুধবার। — দীপঙ্কর মজুমদার

রাত ৮টা। বালি ব্রিজ দিয়ে দক্ষিণেশ্বরের দিকে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। অন্ধকার রাস্তায় ভরসা বলতে একমাত্র মোটরবাইকের হেডলাইট। কিন্তু সেই আলো যতদূর পৌঁছচ্ছে, তার পরে কি রয়েছে তা ঠাহর করতে পারছিলেন না ওই মোটরবাইক চালক। ফলে ঘটল বিপত্তি। আচমকাই রাস্তার উপরে চলে এসেছিল একটি কুকুরছানা। একেবারে সামনে পৌঁছে সেটিকে দেখতে পেয়ে ব্রেক কষতেই ছিটকে পড়লেন মোটরবাইক চালক। প্রাণে বেঁচে গেলেও হাত-পায়ে ভালই চোট পান তিনি।

Advertisement

অন্ধকারে ডুবে থাকা এই ‘পথ’-এর নাম বালি ব্রিজ। সাত মাস আগেও প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো এই সেতু পুরো অন্ধকারে ডুবে ছিল। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছিল পূর্ত দফতর। ২৪ নভেম্বর সারানো হয়েছিল ব্রিজের সমস্ত আলো। কিন্তু ফের অন্ধকারে ডুবেছে ব্রিজ। পথচারী ও গাড়ি চালকদের কথায়, ‘‘সারানোর পরে বেশ কয়েক দিন সব আলো জ্বলেছিল। কিন্তু আবার একই অবস্থা। অধিকাংশ আলোই জ্বলছে না। এ জন্য অন্ধকার ব্রিজও ক্রমশ হয়ে উঠছে বিপজ্জনক।’’ তবে এ বার বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বহু পুরনো এই সেতুর মাঝেমধ্যেই আলো খারাপ হওয়ার রোগ সারানো হবে বলেই দাবি করেছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা।

বারবার একই সমস্যা হচ্ছে কেন?

Advertisement

পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ব্রিজের দু’দিকের রাস্তা মিলিয়ে মোট ৭৪টি ভেপার ল্যাম্প রয়েছে। সব ক’টি আলোরই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে বালি পুর-এলাকার রাস্তার আলোর বাতি স্তম্ভের সঙ্গে। সেখানেই লাগানো রয়েছে টাইমার। যার মাধ্যমে রোজ বিকেল ৫টায় সমস্ত আলো জ্বলে ওঠার কথা এবং পরের দিন ভোর ৫টায় সমস্ত আলো নিভে যাওয়ার কথা। পূর্ত দফতরের কর্তাদের মতে, মাঝেমধ্যে এই ভেপার আলো খারাপ হয়ে যায়, নয়তো কয়েল নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়, বহু পুরনো ওই ব্রিজের আলো মাঝেমধ্যেই নিভে যাওয়ার ‘রোগ’টা বেশ জটিল বলেই মত পূর্ত-কর্তাদের।

পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ব্রিজের ভেপারগুলি যে তারের মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে তা বেশ পুরনো হয়ে গিয়েছে। ট্রেন ও অন্যান্য গাড়ি যখন ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে তখন কম্পন তৈরি হয়। আর সেই কম্পনের ধাক্কাতেই পুরনো বিদ্যুতের তারের সংযোগগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জরুরি ভিত্তিতে সেগুলি মেরামতি করা হয় ঠিকই, কিন্তু স্থায়ী কোনও সুরাহা হয় না। পরবর্তী সময়ে ফের একই অবস্থা তৈরি হয়।

সেই সমস্যা মেটাতেই এ বার পূর্ত দফতর অন্য ব্যবস্থা নিতে চলেছে বলেই দাবি কর্তাদের। তাঁরা জানান, বালি ব্রিজের দক্ষিণেশ্বরের দিকে নামার রাস্তায় একটি বাঁধানো ফুটপাথ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ১৮টি এলইডি আলো লাগানোর জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ওই কাজ সম্পূর্ণ হলে এলইডি-র বিদ্যুৎ সংযোগ যে জায়গা থেকে নেওয়া হবে সেখান থেকেই গোটা ব্রিজের আলোর ব্যবস্থা হবে। বদলে ফেলা হবে পুরনো তার। শুধু তাই নয়, এখনকার ৭৪টি ভেপার বদলে আরও জোরালো আলোও লাগানো হবে। পূর্ত দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ভোটের জন্য এলইডি প্রকল্পের কাজ করা যায়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ওই প্রকল্পের কাজ হয়ে যাবে। এর পরেই বালি ব্রিজের আলোর সমস্যাও মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

কিন্তু ব্রিজের বেহাল কাঠামো সংস্কার থেকে আলো— সব কিছুতেই বারবার রাজ্য প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিললেও কাজের কাজ কিছু হয় না বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাই এখন তাঁদের প্রশ্ন, আলো সংস্কারের কাজেও ফের আঠেরো মাস সময় লাগবে না তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement