আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বাম ও কংগ্রেসের। —ফাইল চিত্র
কলকাতায় জোট করেই লড়ছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। আসন সমঝোতার লক্ষ্যে জেলা বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের বৈঠকও হয়ে গেল মঙ্গলবার।
পুরসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতা পুরসভার ভোট হতে চলেছে। হাতে আর বেশি সময় বাকিও নেই। বাম থেকে ডান— রাজনৈতিক দলগুলি রণকৌশল ঠিক করে ফেলেছে। তৃণমূল, বিজেপি একাই লড়ছে। তবে, কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব পুরভোট নিয়ে আলোচনায় বসেছিল। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস আসন সমঝোতা করেই পুরভোটে যাবে, তা প্রায় নিশ্চিত। তবে, বামেরা ক’টা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, কংগ্রেসকে ক’টি ওয়ার্ড ছাড়া হবে, তা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সিপিএম নেতা রবীন দেব আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু আসন নিয়ে প্রাথমিক ভাবে কথাবার্তা হয়েছে। তবে, আলোচনা এখনও চূড়ান্ত হওয়া বাকি।’’
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল এবং বিজেপিকে রুখে দিতে কংগ্রেসকে সম্মানজনক আসন ছাড়তে রাজি তারা। তেমনই অন্য শরিক বাম দলগুলিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: রাজমাতা থামিয়ে দিয়েছিলেন ইন্দিরা ঝড়, দেউটি নিভিয়ে দিলেন মহারাজা
গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কলকাতায় ৫০টি আসনে পিছিয়ে তৃণমূল। ওই আসনগুলিই পাখির চোখ করতে চাইছে বাম এবং কংগ্রেস জোট। সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে বিজেপিকে ধরে নিয়েই ওই ওয়ার্ডগুলিতে ভোট দিয়েছেন মানুষ। কিন্তু পুরভোটে তেমনটা হবে না। বরং বাম-কংগ্রেসকেই তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে দেখে জোটকেই ভোট দেবেন তাঁরা। বর্তমানে কলকাতা পুরবোর্ড তৃণমূলের দখলে। বামেদের দখলে ১৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। তার মধ্যে সিপিআই ২টি, আরএসপি ১টি ওয়ার্ড। অন্য দিকে কংগ্রেসের ঝুলিতে মাত্র ২টি ওয়ার্ড রয়েছে। বিজেপির দখলে রয়েছে পাঁচটি ওয়ার্ড।
বর্তমানে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে যে সমীকরণই থাকুক না কেন, তৃণমূল এবং বিজেপি-র মোকাবিলায় সব রকমের সমঝোতায় রাজি সিপিএম। কংগ্রসেও নমনীয়তা দেখাচ্ছে। সে দিক থেকে কংগ্রসেকে সর্বোচ্চ ৩৫টি আসন ছাড়তে রাজি তারা। সিপিএম ৮৫ থেকে ৯০টি আসনে লড়তে চায়। বাকি যেখানে বামেদের শরিক দলগুলি শক্তিশালী, সেখানে তারা লড়বে। কংগ্রেসকে কাছে টানতে গিয়ে, শরিকদলগুলির প্রতি কোনও রকম গুরুত্বহীন পদক্ষেপ করতে নারাজ সিপিএম। কোন আসনে কাদের প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে স্থানীয় স্তরে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রার্থী হিসাবে কম বয়সিরা গুরুত্ব পেতে পারেন। আবার দীর্ঘ দিন কাউন্সিলর রয়েছেন, অভিজ্ঞতাও রয়েছে, তেমন প্রার্থীও দিতে চায় কলকাতা জেলা কমিটি। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিলমোহর দেবে আলিমুদ্দিন।
আরও পড়ুন: জ্যোতিরাদিত্যের পর বিজেপির লক্ষ্য কি তারুর! মোদীর চিঠি ঘিরে বাড়ছে জল্পনা
কলকাতা পুরসভায় ৫০ আসনে পিছিয়ে থেকে লড়াই খুব একটা সহজ হবে না বলে মনে করছে তৃণমূলও। গত লোকসভা নির্বাচনে ‘বিপর্যয়’-এর পর দলের গঠনতন্ত্র, প্রচারপদ্ধতি নিয়ে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরও তৃণমূলের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পর পুরসভার হাল ধরতে হয়েছে ফিরহাদ হাকিমকে। ‘টক টু মেয়র’ ফিরহাদকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে বলে দাবি করছে তৃণমূল শিবির। তার উপর পিকে-এর ‘দাওয়াই’ রয়েছে। ঠিক ভোটের আগে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ নামে প্রচারের নেমেছে তৃণমূল। প্রতিটি ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে জনসংযোগ।
বাম-কংগ্রেস জোটও তৃণমূলের রণকৌশলের বিষয়টি মাথায় রেখেছে। সিপিএম সূত্রে খবর, জোটের তরফে তৃণমূলের ব্যর্থতা এবং ভোটে জিতলে কী করতে চায়, সে বিষয়কেই প্রচারে গুরুত্ব দিতে চায় তারা।