বিচারকের এজলাসের সামনেই পুলিশকর্মীদের বেধড়ক মার। ফাইল চিত্র।
আলিপুর আদালতে খোদ মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসের সামনেই পুলিশকর্মীদের মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল সেখানকারই এক দল আইনজীবীর বিরুদ্ধে। বেনজির অভব্যতার এই ঘটনা ঘটেছে সোমবার বিকেলে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গন্ডগোলের খবর পেয়ে খোদ মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক নিজের এজলাস ছেড়ে ছুটে এসে ওই পুলিশকর্মীদের উদ্ধার করেন।
এ দিন বিকেল তখন সাড়ে ৪টে। মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভ্রসোম ঘোষালের এজলাসের সামনেই এক পুলিশকর্মীকে মাটিতে ফেলে পেটানো হচ্ছে। আর তিনি প্রাণে বাঁচতে চিৎকার করে বলছেন, ‘‘বাঁচাও বাঁচাও। আমি পুলিশ।’’ পাশে তাঁর সঙ্গীরা। যাঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা পুলিশকর্মী। বেধড়ক মার খাচ্ছেন তাঁরাও। চিৎকার-গন্ডগোল শুনে এজলাস থেকে কার্যত ছুটে বেরিয়ে আসেন মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক। তত ক্ষণে আদালত চত্বরে রীতিমতো ভিড় জমে গিয়েছে। সবাই মিলে দেখছেন, জনা কুড়ি আইনজীবী মিলে মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছেন পূজালি থানার অফিসার অনিমেষ দাসকে। রেয়াত করা হচ্ছে না তাঁরা সঙ্গীদেরও। বিচারক এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। অভিযোগ, মারের চোটে গুরুতর জখম হয়েছেন ওই অফিসার ও দু’জন মহিলা পুলিশকর্মী।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের (বেঙ্গল) এজলাসে একটি খুনের চেষ্টার মামলার শুনানি ছিল। ওই মামলায় অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যান। কিন্তু অভিযোগকারী মহিলার গোপন জবানবন্দির আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিযুক্তের আইনজীবী। সেই ক্ষোভ অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের আশঙ্কা, ওই মহিলার গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করা হলে অভিযুক্তের জামিন খারিজ হয়ে যেতে পারে।
আদালত সূত্রের খবর, অভিযোগকারী মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে পূজালি থানার আইসি অমিতাভ সান্যাল, মামলার তদন্তকারী অফিসার অঙ্কন দাস, অনিমেষ দাস ও দু’জন মহিলা পুলিশকর্মী আদালত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে আচমকাই এক দল আইনজীবী তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরে জেলা বিচারক জয়ন্ত কোলে মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে আসেন। আদালতে এসে পৌঁছন ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার বিষয়ে মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের চেম্বারে বৈঠক হয়। সেখানে আইনজীবীদের তরফে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। এ দিনের ঘটনা সম্পর্কে আলিপুরের আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘চরম লজ্জাজনক ঘটনা। আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল।’’
আলিপুর আদালতে অতীতেও আইনজীবীদের অভব্যতার নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারককে গালিগালাজ করতেও শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ। জামিন মঞ্জুর হলে গন্ডগোল তো আকছারই হয়। তবে আইনজীবীদের অনেকেরই মতে, এ দিনের ঘটনা আগের সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’’ পরে ফোন করা হলেও তিনি একই উত্তর দেন।