ভূরিভোজ: ক্লাসরুমে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া। শনিবার, তপসিয়ার একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
প্রধান শিক্ষক যাবেন হজে। তাই পড়ুয়াদের ছুটি দিয়ে স্কুলের ভিতরেই প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল তাঁর জন্য। শুধু তা-ই নয়, প্রার্থনা শেষে সেখানে ঢালাও ব্যবস্থা ছিল বিরিয়ানি খাওয়ার। স্কুলের বর্তমান থেকে প্রাক্তন শিক্ষক— সকলেই ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। শুধু ডাক পায়নি পড়ুয়ারা। শনিবার তপসিয়ার ‘মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন’-এর এই ঘটনায় বিস্মিত রাজ্য মাদ্রাসা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ করে এ রকম অনুষ্ঠান করা পুরোপুরি বেআইনি। এমনটা ঘটে থাকলে আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’’
তপসিয়ায় কোহিনুর মার্কেটের কাছে ওই স্কুলটি বহু পুরনো। একই ভবনে সকালের বিভাগ ছাড়াও দুপুরে বাংলা ও উর্দু মাধ্যমের ক্লাস চলে। বাংলা মাধ্যম স্কুলটি রাজ্য মাদ্রাসা পর্ষদ পরিচালিত। উর্দু মাধ্যম স্কুলটি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীন। দু’টি মাধ্যম মিলিয়ে প্রায় ৮০০ পড়ুয়া রয়েছে। বাংলা মাধ্যম স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব কয়েক দিন পরেই হজে যাবেন। স্কুল সূত্রের খবর, নিজের আসন্ন হজযাত্রা উপলক্ষেই শনিবার ওই প্রার্থনাসভা ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিলেন আবদুল। এবং তার জন্য স্কুল ছুটি দিয়ে দেন তিনি। শুধু সকালের বিভাগের ক্লাস হয়েছে। দুপুরে বাংলা ও উর্দু, দু’টি মাধ্যমেরই পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস পুরো বন্ধ ছিল।
স্কুল সূত্রের খবর, শুক্রবার হঠাৎ করেই দু’টি মাধ্যমের পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জানানো হয়, শনিবার স্কুল ছুটি থাকবে। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এ ভাবে স্কুল বন্ধ রেখে অনুষ্ঠান করা কি নিয়মবিরুদ্ধ নয়? প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘‘শুধু আমি হজে যাব বলেই প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়েছে, এমনটা নয়। এ দিন ইদ-মিলনের অনুষ্ঠান ছাড়াও স্কুলের উন্নয়নে যাঁরা দান করেন, তাঁদের নিয়ে সমাবেশ করা হয়েছিল।’’ প্রশ্ন উঠেছে, সমাবেশ তো অন্য দিনও করা যেত। তার জন্য এ ভাবে স্কুল বন্ধ রাখতে হবে কেন? প্রধান শিক্ষকের যুক্তি, ‘‘দু’টি মাধ্যমের এত সংখ্যক পড়ুয়াকে ছুটি না দিয়ে তার মধ্যে অনুষ্ঠান করতে গেলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হত। ছেলেরা চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলতে পারত। সেই আশঙ্কা থেকেই আমরা ছুটি দিয়ে দিয়েছি।’’ স্কুলে অনুষ্ঠান হলে পড়ুয়ারা হঠাৎ চেয়ার-টেবিল কেন ভাঙতে যাবে, তার অবশ্য স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।
অনুষ্ঠানে আবদুল ওয়াহাব। নিজস্ব চিত্র
এ দিন ‘মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন’-এ গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েক জন পড়ুয়া স্কুলের নীচে দাঁড়িয়ে। স্কুল চলছে কি না জিজ্ঞাসা করায় এক ছাত্র বলল, ‘‘শুক্রবার স্কুলে আসিনি। আজ এসে জানতে পারলাম, স্কুল ছুটি। কিন্তু কীসের জন্য ছুটি, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’’ এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ স্কুলের দোতলায় গিয়ে দেখা গেল, অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান চলছে। মঞ্চে উপস্থিত বাংলা মাধ্যম বিভাগের প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব। তিনি নিজেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলা অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রধান শিক্ষককে আসন্ন হজযাত্রা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠান শেষ হতেই জানা যায়, সবার জন্য ঢালাও চিকেন বিরিয়ানির ব্যবস্থা রয়েছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওই স্কুলেরই প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শামসুল হক। তিনি অবশ্য সাফ বললেন, ‘‘স্কুলের ক্লাস বন্ধ রেখে এ রকম অনুষ্ঠান করা একদম ঠিক হয়নি।’’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, পূর্বতন আলিয়া মাদ্রাসা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মহম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘আমি আমন্ত্রণ পেয়ে এই অনুষ্ঠানে এসেছি। তবে ক্লাস বন্ধ রেখে এই ধরনের সভার আয়োজন করা অনুচিত।’’ বাংলা মাধ্যম বিভাগের প্রধান শিক্ষক হজে যাবেন বলে স্কুলের সমস্ত পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হল কেন? রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’
এই ঘটনা সম্পর্কে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।