রাত তখন ১১টা। পুলিশের সামনেই তারস্বরে চলছে জলসা। শনিবার, বালিগঞ্জ এলাকায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
এক মন্ত্রী মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করে যাওয়ার পরেই যেন প্রবল উৎসাহে জলসায় শব্দমাত্রা বেড়ে গেল কয়েক গুণ। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরেও। এমনকী, খোদ স্থানীয় কাউন্সিলর তথা কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন পুলিশকে বার বার ফোন করলেও কাজ হয়নি। অন্যত্র আর একটি জলসায় অন্য এক মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেন তারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জলসা শেষ হওয়া পর্যন্ত। সেখানেও নির্ধারিত সময়সীমা, রাত ১০টার পরে জলসা চলেছে।
দু’টি ঘটনাই শনিবারের। প্রথমটি টালিগঞ্জের বাওয়ালি মণ্ডল রোডের, দ্বিতীয়টি গড়িয়াহাট এলাকার হিন্দুস্থান রোডের। টালিগঞ্জে ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, গড়িয়াহাটে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোথাও মামলা করেনি। অথচ দু’জায়গাতেই পুলিশ মোতায়েন ছিল।
তবে টালিগঞ্জের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী শোভনদেববাবুর সঙ্গে কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা শাসক দলেরই নেত্রী মালা রায়ের তরজা শুরু হয়েছে। বেআব্রু হয়ে পড়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলও।
মালাদেবীর অভিযোগ, বিদ্যুৎমন্ত্রী বক্তৃতা করে যাওয়ার পরেই রাত ১০টায় আরও জোরে সাউন্ড বক্স বাজতে শুরু করে। টালিগঞ্জ থানা, লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ফোন করে বলা হলেও শব্দাসুরের অত্যাচার প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলেছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা স্বীকার করে নিচ্ছেন, রাত ১০টার পরেও সাউন্ড বক্স বেজেছে। তাঁর কথায়, ‘‘খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রী বক্তৃতা করে গিয়েছেন। আমরা
কোন সাহসে অনুষ্ঠান বন্ধ করব?’’
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেববাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘রাত ১০টার পরে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ কম করে দেওয়া হয়েছিল।’’ প্রসঙ্গত, ওই সময়ের পরে সাউন্ড বক্স চালানোরই কথা নয়। তা ছাড়া, জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ওই জলসার আয়োজক তথা ‘বিধান স্মৃতি সঙ্ঘ’ ক্লাবের কর্মকর্তা বিপ্লব সরকারও স্বীকার করছেন, ‘‘রাত ১১টা পর্যন্ত ছ’টা সাউন্ড বক্স বেজেছে।’’ তবে বিদ্যুৎমন্ত্রীর দাবি, ‘‘স্থানীয় কাউন্সিলর ঠিক বলছেন না। আসলে আয়োজকেরা ওঁর দলের লোক নন।’’ মন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, কাউন্সিলরের অনুগতরা কিছু দিন আগে চন্দ্র মণ্ডল লেনে কালীপুজো উপলক্ষে জলসায় রাত দেড়টা পর্যন্ত মাইক বাজান এবং কাউন্সিলর সেখানে সারা ক্ষণ ছিলেন।
স্থানীয় তথা ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মালা রায়ের দাবি, ‘‘মন্ত্রী অসত্য বলছেন নিজের দোষ চাপা দিতে। শব্দে এলাকার মানুষের সমস্যা হচ্ছিল বলেই পুলিশকে জানিয়েছি। রাত দেড়টা পর্যন্ত আমার ওয়ার্ডে মাইক চলেছে, পুলিশের কাছে কি এমন অভিযোগ কেউ করেছেন?’’ টালিগঞ্জ থানা কিন্তু জানাচ্ছে, এমন খবর তাঁদের কাছে নেই।
অন্য দিকে, হিন্দুস্থান রোডে শনিবার ছিল হিন্দুস্থান ক্লাবের বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওই ক্লাবের দুর্গাপুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত তারস্বরে সাউন্ড বক্স বেজেছে। ওই আবাসিক তল্লাটে বড়জোর ৫৫ ডেসিবেল শব্দসীমায় সাউন্ড বক্স বাজানোর কথা। কিন্তু তার চেয়ে বহুগুণ জোরে বেজেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। চন্দ্রিমাদেবীর দাবি, ‘‘শব্দসীমা মেনে রাত ১০টা পর্যন্ত সাউন্ড বক্স চলেছে।’’ তবে পুজো কমিটির সচিব বীথি বসু বলছেন, ‘‘১০টা ২০ পর্যন্ত সাউন্ড বক্স বেজেছে। তাতে কী হয়েছে?’’