বৃষ্টির ভ্রুকুটি সত্ত্বেও জমল শেষ রবি-বাজার

নিউ মার্কেট, রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজ, বড়বাজার, জ়াকারিয়া স্ট্রিট, মল্লিকবাজারে শেষ রবিবারের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবের তিন দিন আগের সেই ভিড় বলে দিচ্ছিল, দোরগোড়ায় উৎসব।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০১:৩৩
Share:

কিনে দে..: ইদের বাজার করতে নিউ মার্কেটে। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেটের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বছর আঠেরোর নাফিসা। কিন্তু মনের মতো লখনউ চিকনের চুড়িদার মিলছে না কিছুতেই। মেয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছেন মা। ইদ বলে কথা! তাই মেয়ের আবদার মেনে নিতে রাজি ব্যারাকপুরের বাসিন্দা, আশরফি খাতুন। বললেন, ‘‘ইদের আগে শেষ রবিবার, তাই আজ বাজার করতে এসেছি। ওদের জন্যেই তো ইদের খুশি।’’ শুধু নাফিসা নন, লিনেন কুর্তি আর লখনউ চিকন চুড়িদারে মেতে উঠেছে এ বারের ইদের বাজার, জানাচ্ছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিউ মার্কেট, রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজ, বড়বাজার, জ়াকারিয়া স্ট্রিট, মল্লিকবাজারে শেষ রবিবারের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবের তিন দিন আগের সেই ভিড় বলে দিচ্ছিল, দোরগোড়ায় উৎসব। ইদের আগে শেষ সাত দিন নিউ মার্কেট লাগোয়া ম্যাডান স্ট্রিটে মাছি গলানোর জায়গা থাকে না। এ দিনও ছিল তেমনই ছবি। অবশ্য মাঝে দুপুরে আকাশ ঢাকা কালো মেঘ দেখে চিন্তিত হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা দ্রুত প্লাস্টিক-ত্রিপল দিয়ে তাঁদের জিনিস ঢেকে ফেলেন। বৃষ্টি থামতেই অবশ্য ফের আবরণ সরিয়ে যেন স্লগ ওভারে ব্যাটিং শুরু হয়। বছর দু’য়েক আগে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে শ্রীরামপুরের আসগর হোসেন, জবা খাতুনদের ইদের বাজার মাটি হয়েছিল। রবিবারের সকালে হাওয়া অফিসের বার্তা শুনে সে কথাই মনে হচ্ছিল ওঁদের। তবে বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড়ও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। এ দিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি মিলেছে দূর থেকে বাজার করতে আসা মানুষের।

চুঁচুড়া থেকে মেটিয়াবুরুজে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন আসরফি বেগম। তিনি বললেন, ‘‘আগেই ঠিক করেছিলাম, মাইনে পেলে ইদের আগের শেষ রবিবারেই বাজার করব। সুতরাং বৃষ্টি এলেও বাজার করেই বাড়ি ফিরব।’’ এক মাস ধরে রোজা পালন করার পরে খুশির ইদের নমাজ পড়তে নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি না পরলে চলে! জ়াকারিয়া স্ট্রিটের দু’পাশে সার দিয়ে পাঞ্জাবির দোকান। তেমনই এক দোকানের ব্যবসায়ী ওয়ায়েজুল হক বলছিলেন, ‘‘সারা বছর ধরে রমজান মাসের দিকেই তাকিয়ে থাকি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন এই সময়ে।’’ তবে ফণীর তাণ্ডবের জেরে ওড়িশা থেকে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাই এ বার আসতে পারেননি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অন্য এক ব্যবসায়ী রহমত হোসেনের কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের জন্যেও ব্যবসা কিছুটা মার খেয়েছে।’’

Advertisement

তবে মাসের প্রথমে ইদ হওয়ায় শেষ ক’টা দিন ব্যবসা জমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। জ়াকারিয়া স্ট্রিটে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি কেনার ভিড়টাও ছিল দেখার মতো। বাহারি টুপি বাছতে দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন বিভিন্ন বয়সি যুবকের দল। কেনাকাটার এই ভিড়টা চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত।

ইদ মানে তো শুধু বাহারি পোশাক-টুপিই নয়! রকমারি সেমুই, লাচ্ছার স্বাদ না পেলে তো এই উৎসবে পূর্ণতাই আসে না। জ়াকারিয়া স্ট্রিট থেকে নিউ মার্কেট, সর্বত্রই বিভিন্ন ধরনের সেমাই কিনতে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। বেনারসি সেমাই থেকে লখনউ সেমুই, ১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সে সব। লাচ্ছার গন্ধে তখন ম ম করছে জ়াকারিয়া স্ট্রিট।

সুগন্ধি আতরের বোতল আর সুর্মা উপহার দেওয়ার জন্য নাখোদা মসজিদের আশপাশে ঘুরে চলেছেন সব বয়সের মানুষেরা। ‘‘ইদের দিনে নতুন পোশাক পরব আর আতর মাখব না! এমন হয় নাকি?’’ হাসি মুখে বললেন বৃদ্ধা সাবিনা বিবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement